Tuesday, 12 July 2022

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা --

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা --

চেনা

চেনা চেনা মুখ আসে কালো মেঘের গায়
অচেনা মানুষের ভিড়ে হারিয়ে খুঁজি তায়
স্বার্থপরতা বাসা বাঁধে ভগ্ন দেউল জুড়ে
ভালোবাসা লুকিয়ে রাখি পদ্মপাতায় মুড়ে

পরজিত মানুষ গোপনে কান্না লুকিয়ে লড়ে
জয়ী মানুষের জয়ের ছায়া দীর্ঘ হয়ে পড়ে।।


রাতের কথা


অনেক রাতের নিদ্রাহীন  যন্ত্রনা
 ছেয়ে থাকে মননে,
কালো আকাশ তারার আড়ালে 
মুখ লুকোয় গোপনে,
উথাল পাথাল জলরাশি
 গর্জন করে,ডাকে ...
ডুবে যাই স্মৃতির অতল গহ্বরে, 
তলিয়ে যেতে যেতে
দেখি 
অন্ধকারে  জীবন্ত এক মুখ,
মুক্তোর মতো সাদা ধবধবে
তাকে নিয়ে বেঁচে আছি,
বলি, আমায় ডুবাইলি রে...।।


শীতল পাটি


গরম কালের ভর দুপুরে
শীতল পাটি পেতে
দুঃখী মেয়ে স্বপ্ন‌ আঁকে
পান্ত খেতে খেতে।

বর আসবে ঘোড়ায় চড়ে
লাগাম কষে হাতে।
বিয়ে করে নিয়ে যাবে
অগাধ গভীর রাতে।

সুখের ঘরে যাবো আমি
শীতল পাটি নিয়ে,
নতুন দিনের আলো মেখে
ধন্য হবে বিয়ে।

ফুল শয্যার সোহাগ রাতে
শয্যা শীতল পাটি
সবাই যখন ঘুমিয়ে যাবে
ছুঁইয়ো সোনার কাঠি।

রূপালী রূপকথা

পূর্ণিমার এক আকাশ জ্যোৎস্নায়---
দু'হাত দিয়ে চাঁদ ধরতে চায়
রূপালী আকাশ ...
ঝিলের জলে ঝিলমিল,
 নিস্তব্ধতা 
কাশবনে সাদা চাদর মুড়ে
 রূপকথা !
অশরীরী আত্মার বিরহ 
মোহমাখা---
 চুপ করে বসে অনুভব হয় উজ্জল 
স্মৃতিরেখা !
বাতাসে মিষ্টি সুর শুনতে শুনতে ,
ঘুম এসে যায় ---
কাশফুলে দোলা লাগে...
 রুপালি রূপকথা !

সম্পাদকের কলমে--

সম্পাদকের কলমে--

রিমঝিম বর্ষা, নাকি ইট ইজ রেনিং অ্যাট ক্যাটস এন্ড ডগস ? এক দিকে প্রেমিক-প্রেমিকা ঝিরিঝিরি বর্ষায় ভিজে প্রেম করছে, অন্যদিকে মেঘ ফাটা প্রচন্ড বর্ষণে কত না লোক ভেসে গেল ! প্লাবনের ভয়াবহ তোড়ে ভেসে গেল অসংখ্য জনপদ, কত লোকের না  মৃত্যু হল। 
বৈচিত্র্যময় দেশের একদিকে কাঠফাটা রোদ, অন্যদিকে ভেসে যাচ্ছে দেশ, আবার তৃতীয় দিশায় জমাট বরফ, শীত কাঁপে জমে যাচ্ছে মানুষ। তবু কেউ থেমে যায়নি, সময়ের সাথে সবাই হেঁটে যাচ্ছে, সবাই দুঃখের মাঝখান থেকে সুখটুকু শুষে নেবার চেষ্টা করছে। লেখক লিখে যাচ্ছেন, কৃষক মাঠে  নাঙ্গল নিয়ে নেমেছে, সব চলছে। আবার যে শেষে, সে নিশ্চিহ্ন। মৃতের ওপর একদিন আবার সবুজ ঘাস জন্মায়, অনুর্বর সৃষ্টির মাঝে আবার ফুল ফুটে উঠে। এটাই জীবন, এটাই বদ্ধভূমি, এটাই কবিতার উর্বর ভূমি। মৃত্যু শিয়রে রেখে কবি তার আগামীর কবি ভাবনায় আতুর হয়ে ওঠে। কাগজ-কলমের অভাবে কত ভাব ভাবনা কবিতার জীবন দেখো হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে...আমরা কেউ তার ঠিকানা রাখি না।
যাই হোক, এবারের কবিতার ব্লগ ও ই-পত্রিকা, স্বরধ্বনি, নিয়ম ভেঙে পাঁচ দিন বিলম্বে প্রকাশিত হল। অবশ্যই এটা অনিবার্য কারণবশত। আজ এ পর্যন্ত। নিবেদন ইতি -- তাপসকিরণ রায়।

সহ-সম্পাদকের কলমে--

বৈচিত্র্যময়ী প্রকৃতির অপরূপ লীলা নিকেতন এই পৃথিবী। সমৃদ্ধির এক আশ্চর্য ভাণ্ডার তার করায়ত্ত, সেই সম্পদের সুষ্ঠ বিন্যাসের ফলেই প্রকৃতি হয়ে ওঠে  অপরূপা, কত না রহস্য ফুটে ওঠে তার অপূর্ব  লীলায়। লীলায়িত ভঙ্গিমায় ছন্দময়ী প্রকৃতি  বসন্তে মেতে ওঠে বর্ণময় ফুলের সম্ভার নিয়ে ,ঘনঘোর বর্ষার অঝোর ধারায় মানুষের অশান্ত মন  যখন উতল হয়ে ওঠে, অন্তরের মাঝে দয়িতের আহ্বান শুনে হয় চঞ্চল।  প্রকৃতিও  তখন সজল কাজল মেঘের ঘোমটা দিয়ে নিজেকে মুড়ে নেয় রহস্যের আবরণে।সে রহস্যময়তার হাতছানি এড়াতে পারেনা বলেই মানব মন হয়ে ওঠে বিরহ-কাতর , বিরহী মনের স্বতস্ফূর্ত প্রকাশ ঘটে গানে, কবিতায়।--সাবিত্রী দাস।

দেবতা নির্বিকার হারান চন্দ্র মিস্ত্রী

দেবতা নির্বিকার    
হারান চন্দ্র মিস্ত্রী 

আমি আহাম্মক নই।
তোমাকে বলেছি আমি, তুমি দেবী?
নিশ্চয় তোমার কিছু গুন আছে।
সেই অপুর্ব গুণের জন্য আমি তোমাকে সম্মান করি।

তোমার অনেক অন্ধ ভক্ত আছে।
তোমার ভিতরে দেবত্ব লাগিয়ে 
ভক্ত হতে চায় তারা, 
হতে চায় তোমার পূজারী। 
তার মন্দিরে থাকবে তুমি মাটির প্রতিমা হয়ে। 

লেগেছে ভক্তের আনাগোনা 
ভিড় মন্দির চত্বরে ঠাসা, 
প্রসাদ আসছে থালা ভরে, সুশীলা দক্ষিণা সাথে। 
আমি চমকিত তার দারুণ অতিথ্যে। 

পূজারী পয়সা পায়, সোনার গহনা পাও তুমি- 
তুমি নও তোমার প্রতিমা। 
এসব সম্পদ পূজারীর প্রাপ্য চিরকাল। 
পূজারী হয়েছে ধনবান। 
খাটে যে জোটে তার দেবতার ধন। 
দেবতা সবেতে নির্বিকার। 
ঠিক তেমনি তুমিও দেবী।
______________

***হারান চন্দ্র মিস্ত্রী 
পিতা-সহদেব মিস্ত্রী
মাতা-ছায়া মিস্ত্রী
জন্ম-17ই মার্চ 1970, 
জন্মস্থান ও ঠিকানা-গ্রাম-আমতলা, পো:-আমতলা, থানা-ক্যানিং, জেলা-দক্ষিণ 24 পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ
শিক্ষা-1991 সালে ট্যাংরাখালী বঙ্কিম সরদার কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন।
পেশা-প্রাথমিক শিক্ষক 
সাহিত্য কর্ম- 1990 সালে কলেজ পত্রিকায় প্রথম গল্প "শিকার"প্রকাশ পায়। 2002 খ্রিস্টাব্দে "এবং প্রিয়শিল্প" পত্রিকায় প্রথম কবিতা "অর্পণ" প্রকাশ পায়। প্রথম প্রকাশিত ছড়ার বই "ছড়ার আকাশ" প্রকাশ পায় 2010 খ্রিস্টাব্দে। দ্বিতীয় ছড়ার বই "ছড়ার পাতা" প্রকাশিত হয় 2011 সালে। 2012 খ্রিস্টাব্দে ইন্সটিটিউট অফ যোগা তন্ত্র অ্যাস্টোলজিক্যাল স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার তাকে "কবিতা সুধাকর" সম্মান প্রদান করে। 

Friday, 8 July 2022

পাখির চঞ্চু থেকে-- তাপসকিরণ রায়

পাখির চঞ্চু থেকে-- তাপসকিরণ রায়

পাখির চঞ্চু থেকে কখন যে সে বীজ গড়িয়ে গেছে... 

মাটিতে আলোকে ছায়াতে 

মূর্ছিত সে সংলাপ থেকে উগলে উঠছিল কিছু আন্তরিক অনুভূতি। 

এক গর্ভীনী মার শরীর থেকে বিদ্যুত চমকে উঠছিল, 

তলে তলে কৃষ্ণ বুঝি জন্ম নিচ্ছিলো--কংস তখন নিদ্রামগ্ন, 

বন্দী গরাদের ছিদ্র দিয়ে অনুগামী চাঁদ উঠে আসছিল। 

অন্য দিকে পুরুষ অন্তরে একই কংস কিংবা রাবণ। 

শরীর কখনো জীয়ে ওঠে, ঠেলে ওঠে সব কামজ হিংস্রতার পাংখ, 

সেখানেই পড়ে থাকে পাখ-পাখালিচিহ্ন। 

সনাক্তের ময়দানে আগামী চরিত্রগুলি গজিয়ে ওঠে-- 

সেই রাম সীতা ও রাবণের মাঝখান দিয়ে। 

Thursday, 7 July 2022

মুহা আকমাল হোসেনের কবিতা

মুহা আকমাল হোসেনের কবিতা --

অন লাইনে স্বপ্ন কিনি


একটা নিঃঘুম রাত

বালিশে থুতনি রেখে অন লাইনে স্বপ্ন কেনে।


শহর ঘুমাচ্ছে 

দাম্পত্যের এলোমেলো বিছানা

আমরা তারাফুল কুড়তে যাব

সাত বোন চম্পার সাথে..



তোর জন্য 


 তোর জন্য  একটা  বিকেল উষ্ণ হয় মাটির ভাড়ে

তোর জন্য হরিণ বিকেল চরতে আসে নদীরপাড়ে।


তোর জন্য  আর্ট পেপারে বর্ষা বিকেল  বন ময়ূরী

তোর জন্য  বেহেশত হারাম, ও সখি তন্বী হুরি।







মুহা.আকমাল হোসেন।জন্ম ২ রা জানুয়ারি-১৯৮১।গ্রাম ব্রহ্মোত্তর,পোষ্ট -ছোটসুজাপুর,  জেলা- মালদহ।পেশায়  শিক্ষক । ঐতিহ্যবাহী  দেশ, প্রথম সারির দৈনিক সহ'  দু'শতাধিক ছোট পত্র পত্রিকায় লিখে  চলেছেন।।কবিতার ভাষান্তর  হয়েছে।    প্রকাশিত- কাব্যগ্রন্থ - বিস্রস্ত বাস্তবতা( ২০০৮), প্রেম,প্রিয়াপুষ্প ও পড়ন্ত বিকেল,(২০১০) কমরেডের ডাইরি (বুদ্ধ পূর্নিমা-১৪১৮), মিনার হোসেনের ঘর উঠোন, (২০১২) ভাতের ঠিকানায় কাঁদে ভারতবর্ষ(২০১২  ১০,জানুয়ারি)  পৃথিবীর একলা কমন রুম(২০১৫)  ছেঁড়া কাফনের মেঘ (৭ ফেব্রুয়ারী  ২০২১)  "হামরা কলিয়াচকের লোক (২০২২)'সম্পাদিত গ্রন্থ -গ্রাম মালদা  কবিতা(২০১৩) |১৯৯৯ থেকে 'যত্রিক' কবিতা 7৭ সম্পাদনা করেন|  এছাড়া গৌড়বঙ্গ সাহিত্য পত্রিকা' 'নয়া কাফেলা' পত্রিকার সহ সম্পাদক। 


আমায় দোষ দিওনা-- উত্তম চক্রবর্তী, ব্যাঙ্গালোর

আমায় দোষ দিওনা--

উত্তম চক্রবর্তী, ব্যাঙ্গালোর



     আমি যদি বদলে গিয়ে 

     মেঘ হয়ে ভাসতে ভাসতে 

     আকাশটাকে ভেঙে টুকরো টুকরো 

     করতে করতে ঢাক ঢোল বাজিয়ে 

     বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ি,

     আমায় দোষ দিওনা.

 

      আমি যদি বদলে গিয়ে 

      মরুভূমি হয়ে হা পিত্যেশ করে

      সারাদিন রোদ্দুর গিলে 

      বসে থাকি উটের পায়ের 

      খোঁচার জন্য,

      আমায় দোষ দিওনা.

 

     আমি যদি বদলে গিয়ে 

     একটা রূপার টাকা হয়ে

     ঘুরে ঘুরে ফিরি লোকের 

     নোংরা হাতে হাতে,

     আমায় দোষ দিওনা .

 

     আমি যদি বদলে গিয়ে 

     আমার কলমে কবিতার বদলে 

     ঝরাই নোনতা লাল রক্ত,

     আমায় দোষ দিওনা.

          ---------x---------- 

গোবিন্দ মোদকের দুটি কবিতা

গোবিন্দ মোদকের দুটি কবিতা --

১. এভাবেও মুছে যাওয়া যায়

এভাবেও মুছে যাওয়া যায় -
হঠাৎ বৃষ্টি এলে শ্লেটের লেখার মতো, 
যাপিত জীবন জুড়ে থেকে যায় জলদাগ, 
আঁকিবুকি, এলোমেলো ঢেউয়ের সাতকাহন, 
বিষাদের বনমালী আর দীর্ঘনিঃশ্বাস ....
তবু ঘুঁচে যায় নিদাঘের মাখামাখি,
বহু ব্যবহৃত পোশাক পাল্টানোর সহর্ষ মুহূর্ত ... 
এভাবেও মুছে যাওয়া যায়!

#

এভাবেও মুছে যাওয়া যায় -
ক্যালেন্ডারের পাতা বদলের আশ্চর্য সময় 
যেমন ইতিহাস হয়ে যায় অবহেলে; 
কতো রাজা রানী মন্ত্রী যন্ত্রী 
মুছে যায় সময়ের ষড়যন্ত্রে -
দলিল-দস্তাবেজ মরচে-ধরা কথকতার মতো 
মহাফেজখানা গড়ে। তবু ডানা মেলে 
কাঙ্খিত মুহূর্ত আর ফিরে আসে না। বড়ো অসময়।
এভাবেও মুছে যাওয়া যায়!

#

এভাবেও মুছে যাওয়া যায় -
ঝরে যাওয়া শাল পলাশের ক্লান্ত ফুলের মতো, 
অপ্রয়োজনীয় চিঠিপত্র কিংবা ফালতু গল্পের মতো, 
রাত-ইতিহাস মনে রাখে না বিকেলের আয়োজন, 
প্রদীপ জ্বালানোর আগে থাকে ঢের প্রস্তুতি ...
প্রবাসে যাওয়ার আগে কতো অশ্রুজল ...
না লেখা গল্পের শিরোনাম ভুল হয়ে যায় ...
বিস্মৃতি আসে বাতাসের বাঁশিতে ...
এভাবেও মুছে যাওয়া যায়!


এভাবেও মুছে যাওয়া যায় -
আর্যাবর্ত জুড়ে রাজত্ব চালায় শক-হূণ-পাঠান, 
মঙ্গোল অথবা থোড়-বড়ি-খাড়া...
ভেঙে পড়ে রাজচ্ছত্র কালের নিয়মে ...
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় অকারণ পোড়ে 
কোনও এক সম্রাটের অকারণ আক্রোশে ...
সভ্যতা-সংস্কৃতি মুখ লুকায় ব্যভিচারের অন্তরালে, 
এভাবেও মুছে যাওয়া যায়!!


২. গ্রামের হাট 


আজও আছে গ্রামের হাট, আছে লেনাদেনা, 
জোরকদমে চলে আজও জিনিস বেচাকেনা। 
রাস্তার পাশে, নদীর ধারে, রেলস্টেশনের ধারে, 
গ্রাম-গঞ্জের প্রাচীন সে হাট বসে বুধ বারে । 
হাঁস-মুরগি, মাছ কিংবা নানান সবজি কাঁচা, 
নেইকো হাটে স্থায়ী দোকান সবই বাঁশের মাচা। 
শাড়ি-লুঙ্গি, অল্প দামের রেডিমেড-ও নানা, 
দা, খুরপি, বেলুন-পিঁড়ি কিনতে নেইকো মানা।
মাটির পাত্র, হাঁড়ি-কলসি কিংবা মনোহারী, 
হাটে গেলে মিলবে গো ভাই নানান দরকারী। 
ফেরিওয়ালার বিচিত্র হাঁক, নানা রকম পণ্য, 
ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম বেচাকেনার জন্য। 
ইঁদুর মারা বিষ কিংবা প্লাস্টিকের সব খেলনা, 
হাটে পাবে বাঁশের ঝুড়ি কিংবা বেতের দোলনা। 
কবিরাজি ওষুধ আর বাতের নানান তেল,
মশলাপাতি, ফলের দোকান, ডাব নারকেল।
হাঁকাহাঁকি – দরাদরি – জিনিস চেনা-চিনি,
মুখটা জুড়ে চওড়া হাসি লাভটা পেলেন যিনি। 
গ্রামীণ জীবন জুড়ে থাকে সপ্তাহের এই হাট, 
হাট ফুরালেই অন্ধকারে একলা জাগে মাঠ।।



***লেখক পরিচিতি :-

গোবিন্দ মোদক। 
সম্পাদক: কথা কোলাজ সাহিত্য পত্রিকা। 
পিতা: কানাই লাল মোদক। 
মাতা: প্রতিভা রাণী মোদক। 
লেখকের জন্ম: ৫-ই জানুয়ারি, ১৯৬৭ 
বাসস্থান: রাধানগর, কৃষ্ণনগর, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ। ডাক সূচক- 741103 
মুঠোফোন নম্বর- 7044404333
শিক্ষাগত যোগ্যতা: M.Com (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)।  
পেশা: প্রথম জীবনে অধ্যাপনা, পরবর্তীতে India Post (ডাক বিভাগ)-এ কর্মরত।
নেশা: লেখালিখি। বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র হওয়া সত্বেও ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি ঐকান্তিক অনুরাগে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম। ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, রম্য রচনা, উপন্যাস ইত্যাদি লিখলেও ছোটদের জন্য ছড়া-কবিতা ও গল্প লেখার মধ্যেই খুঁজে পান অধিকতর তৃপ্তি। প্রচারবিমুখ আত্মমগ্ন এই মানুষটি লেখালিখি ছাড়াও ভালোবাসেন: বই পড়া, গান শোনা, পত্রিকা সম্পাদনা, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা, বেড়ানো, সাহিত্য বিষয়ক নির্ভেজাল আড্ডা, এলোমেলো ভাবনায় নিমগ্ন হওয়া। 
অপছন্দের বিষয়: যে কোনও ধরনের রাজনীতি। 
প্রথম লেখালিখি: প্রথম কবিতা "প্রেম" প্রকাশিত হয় শারদীয়া অভিষেক (১৯৮৯) পত্রিকায়। প্রথম গল্প ছাপা হয় তটরেখা পত্রিকায় (হরিপদ'র গল্প) ১৯৮৯ সালে। প্রথম কিশোর উপন্যাস "গুপ্তধনের খোঁজে" প্রকাশিত হয়েছে ১৯৮৯ সালে শারদীয় "আসানসোল হিতৈষী" পত্রিকায়। লেখালেখির সেই প্রবাহ এখনও ভীষণভাবেই বহমান … নানা ধরণের লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে চলেছে দেশ ও বিদেশের অজস্র পত্র-পত্রিকা ও দৈনিকে।
প্রকাশিত গ্রন্থ: হারিয়ে গেছে ডাক-বাক্স, ধিতাং ধিতাং বোলে, অদ্ভুত যতো ভূতের গল্প।
প্রকাশিতব্য গ্রন্থ: পদ্য ভরা আমার ছড়া, ছন্দ ভরা আমার ছড়া, রূপকথার রূপ ও কথা, ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ, গুপ্তধনের সন্ধানে, জীবনের রোদ-রং ইত্যাদি।
সম্মাননা: পাঠকের ভালোলাগা এবং ভালোবাসা-ই সবচেয়ে বড় পুরস্কার।

অসিত কুমার পালের তিনটি কবিতা

অসিত কুমার পালের তিনটি কবিতা --

(১) জীবনের সাথে সমঝোতা করে নিন

আপনি যদি ষাটটি বসন্ত পার করে থাকেন
তবে আপনাকে অভিনন্দন জানাই ।
আপনার পরবর্তী জীবন আনন্দেই কাটবে
বলে আমার বিশ্বাস ।

আপনার সন্তান সন্ততিদের সাথে
সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলুন  ,
বিনিময়ে তাদের থেকে কিছু পাওয়ার
আশা কখনোই রাখবেন না ।

ছোটরা আগ্রহী থাকলে তবেই কোন বিষয়ে
তাদের সুপরামর্শ দিন ,
আপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান অযথা
বিতরণ করে তাদের বিরক্ত করবেন না ।

নিজের কাজ যথাসম্ভব নিজে করে নেওয়ার
অভ্যাস তৈরি করুন ,
কখনোই অন্যদের কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না
 বা কোন বিষয়ে নাক গলাবেন না ।

যথাসম্ভব কম কথা বলার অভ্যাস তৈরি করুন,
অন্যদের কথা বোঝার চেষ্টা করুন । 
নিজের অবস্থায় খুশি থাকায় চেষ্টা করুন, 
বন্ধুদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন ।

 ছোটখাট  বিষয়ে অভিযোগ করবেন না
 যা পাচ্ছেন তাই নিয়ে খুশি থাকুন ,
 কে আগে  কে পরে যাবে সেটা ভুলে
একা জীবন কাটানোর অভ্যাস করুন ।

খালি হাতেই চলে যেতে হবে ,তাই
অধিকার  বজায় রাখার চেষ্টা করবেন না ।
 মনের দুঃখ বেদনা লুকিয়ে রেখে
 জীবনের সাথে সমঝোতা করে নিন ।


(২) জীবনের সত্য


সময় এগিয়ে চলেছে, কিন্তু কেমন ভাবে ?
বোঝাই গেল না অস্থির জীবন্যাত্রায়
কখন আমাদের বয়স টা বেড়ে গেল ।

কোলে পিঠে চড়া বাচ্চাগুলো কখন 
যে আমাদের কাঁধ বরাবর পৌচেছে ;
তার হিসাবই রাখা গেল না ।

ভাড়া ঘরে জীবন শুরু করে কখন 
যে নিজেদের বাড়িতে পৌঁছে গেছি  ;
সেটা বুঝতেই পারলাম না ।

সাইকেলে হাফ প্যাডেল করতে করতে 
কখন যে বাইকে সওয়ার হয়ে গেছি ;
কেই বা তার হিসাব রেখেছে ।

মা বাবার উপর নির্ভরশীল থাকতে থাকতে
কখন যে স্ত্রী সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছি ;
তার হিসাব রাখা বেশ কঠিন ।

সুন্দর কালো চুলে চিরুনি চালাতে চালাতে
কখন যে মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে ;
নিজেও তার খবর রাখি নি ।

হন্যে হয়ে চাকরী খুঁজতে খুঁজতে কখন
যে অবসরের  বয়স এসে গেছে ;
তার খেয়াল রাখা হয়নি ।

বাচ্চাদের জন্য পয়সা কামাতে কামাতে
কখন সে বাচ্চারাই কামাতে শুরু করেছে ;
আজ আর তা মনে পড়ে না ।
 
বিশাল পরিবারে দাদু দিদা, কাকা পিসির
ভাই বোনের সাথে হেসে খেলে বড় হয়েছি ;
আজ  কে কোথায় , কে তার খবর রাখে ?

নিজের লোকেদের জন্য কিছু করার কথা
ভাবতে শুরু করলে শরীর সাথ দেবেনা ;
জীবনের এই সত্যটাকে ভাবতেও পারি নি ।


( ৩ ) মাদকতা


পান করার পরে পাটা টলে যায়
কিছুটা  মাতলামিও দেখা যায় ;
পানশালাতে যারা সময় কাটায়
তাদেরকেই  মদ্যপায়ী বলা যায় ।

তাদের কি এমন দুঃখকষ্ট থাকে
 কেন তারা সহজ পথে চলে না ?
 একটু মনখারাপ হলেই মদ্যপান
কেনই বা এমন মতি হয় জানিনা ।

অভ্যাসের বসেই মদ্য পান করে
বরবাদ হওয়ার পথে পা বাড়ায়;
মদ্যপান করার জন্যই যে তারা
রোজই নতুন বাহানা খুঁজে পায়  ।

দিনের বেলা হোক কিংবা রজনী
মদ্যপানের জন্য সর্বদাই তৈয়ার ;
বিয়ে হোক বা  অন্য কোন উৎসব
মদ্যপানের উপলক্ষ্য চাই কি আর ।

পানশালা হল এমন এক জায়গা
যেখানে রামও যায় রহিমও যায় ;
সেখানে জাতি ধর্ম সব একাকার
মদিরাতে সবাই তো আনন্দ পায় ।

 এক পাত্র মদিরা অমৃতের সমান
সকলেই যে মদিরা মন্ত্র জপ করে
নিজের করুন অবস্থাটা তুলে ধরে
মদ্যপানের অজুহাতটা খুঁজে মরে।

এমন মাদকাসক্ত অবস্থার মধ্যেও
মাতালরা দরকারী কাজ চালায় ;
মদিরা পান করতে করতেই তারা
জীবনের তরী ভাসিয়ে নিয়ে যায় ।

সব জ্ঞানীগুনিরা সঠিক বার্তা দেয়
জ্ঞানগর্ভ কথাও বলে থাকে সবে;
- মদিরা পান করা থেকে দূরে থাক
 পানশালার কাছ সর্বদাই দূরে রবে ।

-----------------------------------------

রচনা - অসিত কুমার পাল

অমিত চক্রবর্তীর তিনটি কবিতা

অমিত চক্রবর্তীর তিনটি কবিতা -- 

১ অসমাপিকা

কি একটা বলতে গিয়ে তুমি থেমে গেলে হঠাৎ -

অসমাপিকা ক্রিয়ার বিন্যাস এখানে

চোরি চোরি চুপকে গতিপথ, অথবা

আক্রমণ এবং দৌরাত্ম্যের ফরমান।

 
আমি বরং মনটাকে এলিয়ে দিই; হাঁটু অবধি

ভিজে চুল তোমার, সমুদ্রস্নানে উৎসাহ নেই,

এসো আমরা জলের অন্যরূপ দেখি।

ধর আমরা ঢুকছি একটা গ্রিনহাউসে,

হাইড্রোফোনিক টেকনিক, মাটি নেই কোথাও তবু

ফলন্ত গাছ, দেখো কেমন পটিয়সী ওই

লাল চেরি–টমেটোগুলি।

 
ঘোর ভাঙে আমার, এখনো থেমে আছ

তুমি ক্রিয়াপদ, অসমাপিকা এবার সমাপ্তির

দিকে এগুচ্ছে, লাল লেস মাখা বিকিনি

আবার জড়াচ্ছে গোলকধাঁধার স্মারক।


সেই তুলোওঠা লেপটা


“I want to be the rough clothes, you can’t sleep in”, Ada Limón

একষট্টিতে মারা যেতে চাইনা আমি, একাত্তরেও নয়
তবু শীতল হয়ে আসে গ্রন্থি
তরল মনে শুধু সতেরোর মুখ তোমার –
একটা বানানো ব্যস্ততা, চাপা টেনশ্যন,
প্রতীক্ষা বা আশার একটা বাতুল খেপামি।

 ইদানীং বাঙলা সিরিয়াল, গরম রুটি নিয়ে আছ তুমি,
জৈষ্ঠ্যে বাগানের আম – পুরোপুরি
শান্তিপূর্ণ তোমার দিনরাত, পরিস্থিতি,
তাই মুলতুবি রাখি আমার মনখারাপের সভা বা
একেলার ঝটিকা আক্রমণ
শুধু হতে চাই সেই তুলোওঠা লেপটা –

 সেই খসখসে, স্বস্তিহীন লেপ
গায়ে দিলে মনে হবে কী একটা অদ্ভুত,
কী একটা ঠিক নয়, ধুনুরী ডাকিয়ে
পেঁজা দরকার, পুনর্মার্জন,
আমি হতে চাই তোমার মনের ভেতরে
সেই তুলোওঠা লেপটা।



বায়োমিমেটিক ধ্যান

আজ সকালে চকচকে সবুজ
গাছে ঘেরা পথ, হতাশার তিলমাত্র নেই
কোথাও –
নির্ভরযোগ্য নয়? ঠিকই।
একটা নাছোড়বান্দা সন্দেহ কিন্ত
ঘিরে রাখে আমাদের, এই গাছটিকে দেখো
ইতিমধ্যে পোকা ধরেছে বা
উড়ে আসা অসুখ, পাতার নীচে খসখসে
ডুমোভাব।

এইভাবেই আমরা একটা ক্রসরোডে আসি,
বিবেকদংশন উপুড়চুপুড়,
ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে
হুড়মুড়িয়ে
আনন্দ আর হতাশার উজানভাটি –

তারপর আবার ঝাঁকুনি। আবার ভুল প্রেম,
ভুল উৎকন্ঠা।

ওই গাছে তার প্রতিরোধ মাপা হবে কি? আমি ভাবতে থাকি –
তুমি পঙ্গু গাছটিকে বেড় দিচ্ছ ঘিরে,
কোলে তুলে পুন:প্রতিষ্ঠা, আর এই দু’ধারা মিলতেই
ফের অলকানন্দা, ভাগীরথী, দ্বন্দ্ব অহর্নিশ,
বন ছুঁয়ে ফের ফুটে উঠল আমাদের
শুভচিন্তা, আমাদের 
বায়োমিমেটিক ধ্যান।


***Amit Chakrabarti
Address: 200 Fourwinds Ct.
Manhattan, Kansas, 66503
USA
Phone/WhatsApp: 01-785-341-6761
FaceBook Profile:  https://www.facebook.com/amit.chakrabarti.18
20211111_193632.jpg

***কবি পরিচিতি - 
অমিত চক্রবর্তীর জন্ম সোনারপুর অঞ্চলের কোদালিয়া গ্রামে। ছাত্রাবস্থায় অনেক লেখা এবং ছাপানো কলকাতার নানান পত্রপত্রিকায়। পড়াশোনার সূত্রে আমেরিকা আসা ১৯৮২। এখন ক্যানসাস স্টেট ইউনিভারসিটি তে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ও প্রাক্তন কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের ডিন । প্রকাশিত কবিতার বই দুটি - "অতসীর সংদারে এক সন্ধ্যাবেলা" (রা প্রকাশন ২০২১) ও "জলকে ছুঁয়ো না এখানে" (মিসিসিপির মেঘ প্রকাশন ২০২২)। দুটি পত্রিকার সহ সম্পাদক - উত্তর আমেরিকার নিউ জার্সি অঞ্চলের পত্রিকা "অভিব্যক্তি" এবং "উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা" কবিতা পত্রিকা।

হামিদুল ইসলামের তিনটি কবিতা

হামিদুল ইসলামের তিনটি কবিতা --
             
জীবন

তোমার হাতে এখনো তুলে দিই 
পুরোনো সম্পর্ক 
নাবাল ভূমিতে বৃষ্টির সুবাস। ভেজা ভেজা কৈশোর   ।।

আমরা তখনো অবুঝ 
আমরা তখনো কচি কচি সকালের রোদ্দুর    ।।

আমরা তখনো মায়া 
নিঃশব্দ প্রহর গুণি শূন‍্য প্রান্তরে 
ছায়াডোবা জলে ভাসে শাণ বাঁধানো স্বপন    ।।

চেতনার জাজিমে আঁকি প্রাচীন স্মৃতি 
আমরা তখনো মৃত‍্যু দেখি নি। দেখেছি জীবন    ।।


মিছিল 

আকাশে সারি সারি মেঘ 
দোঁআসলা জমিনে কার্তিক ফসলের ঘ্রাণ 
প্রতিদিন কথা সাজাই   ।।

শব্দের স্থাপত‍্যে আঁকি নস‍্যাৎ প্রহর 
সড়কের ক্ষতে মিশে যায় স্পর্ধার উদ্বাস্তু শিবির 
আমরা ইট কাঠ পাথরে জীবন কুড়োই    ।।

খাদানে ডুবছে সূর্য 
শিউলি সকাল 
আমাদের আমলকি বনে ঘুঘু ডাকা বিকেল। চেতনায় সুকান্ত    ।।

ক্ষরণের ইতিহাস পাল্টে যায়। বুকের ভেতর স্লোগান দেয় উদ্দীপ্ত মিছিল     ।।

                             
 ৩ আমার ভূবন 

কখনো এমনও হয় ভুলে যাই সব 
শিশুর মতো হাত পা ছুড়ি জলে ভাসে ভূবন    ।।

মেহেদি বাগানে সারাদিন ক্ষুধার্ত কাকের কা কা 
বুকের ভেতর পাথর 
ভেঙে পড়ে সমস্ত স্বপ্ন। শহীদের গা বেয়ে নামে চাপ চাপ প্রত‍্যয়    ।।

উঠোন জুড়ে খেজুর গাছের ছায়া 
দুচোখে কান্না। হাসনাহানা বোঝে না কষ্টের অতলান্তিক   ।।

তবু গাছেরা ঋতুমতী হয় 
বোধি লাভ করে গৌতম বুদ্ধ 
আমাদের কোঁচড়ে একুশ। হাঁটতে হাঁটতে আমরা পেরিয়ে যাচ্ছি খনিজ ভূবন। শিফন বাড়ি   ।।


***পরিচিতি--
আমি হামিদুল ইসলাম। জন্ম 1955 সালের 5 মার্চ। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত কুমারগঞ্জ ব্লকের ভোঁওর গ্রামে। শৈশব থেকেই সংসারে অভাব অনটন। ফলে মাতুলালয়ে গমন। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক। পরে আবার বাড়িতে ফিরে আসা। মানুষের লাথিগুড়ি খেয়ে বালুরঘাট কলেজ থেকে স্নাতক ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। দশমের ছাত্র থাকাকালীন স্কুল ম‍্যাগাজিনে প্রথম কবিতা প্রকাশ। পরে বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ। এ যাবৎ 9 টি একক কাব‍্যগ্রন্থ। 41 টি যৌথ কাব‍্য সঙ্কলন। 4 টি একক ই কাব‍্য। আছে অপ্রকাশিত নাটক ও উপন‍্যাস। প্রাঙ্গণ সাহিত্য পত্রিকা থেকে ' সাহিত‍্য রত্ন ও কবি সাগর ' সম্মাননায় সম্মানিত। এখন যবৎ বাঁচি তবৎ লিখি। লেখা আমার নেশা।

কুটিল, কুপথ--স্নেহাশীষ মুখোপাধ্যায়

কুটিল, কুপথ--
স্নেহাশীষ মুখোপাধ্যায়


পণ্ডিতের গ্রহ থেকে আবার কান্না শুনতে পেলাম।
সর সর যারা বলছে, তারা কেউ কাঁদছে না - 
কিন্নর থেকে ভাল্লুকের মতো নামছে।
বন্ধ জানলাটা কতোক্ষণ থাকবে,
ভাবতে গিয়ে দেখি, 
বাড়ির নিচে, পাহাড়ের গায়ে
গাড়িগুলো কিভাবে যেন দাঁড়িয়ে আছে। 
সর সর করে পাথুরে ভাল্লুকগুলো, যোদ্ধা  
কিম্বা আততায়ীর মতো নামছে। 
গায়ে গায়ে ধোঁওয়া উঠছে।
সাদা ধোঁওয়ায় তাদের, রাতের রঙের মতো
কালো মনে হচ্ছে না!  

তারপর লাফ দিতে দিতে
বাসতেরি সেতুর গায়ে
একটা ভাল্লুক আছড়ে পড়লো।
তার আগে শিস উঠছিলো। 
ব্যস! সেতু শেষ। সেতু উলুঝলু হয়ে গেছে।
নিচের খাদের জলে সেতুর পাষাণ-পায়রার ডানা 
চিৎ হয়ে পড়লো। বন্ধ জানলা খুলেছো,
খুলে খুলে দেখছো, কে তুমি! 
লোভ, না কর্তব্য, নাকি কিছু করার নেই?
শিস উঠছিলো। একটা প্রাণভোমরা মুখ থেকে
যেন বের হয়ে আসছিলো। অন্য একটা ফুটেজ আরো
এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চলন্ত গাড়ি, সালতুজ নদীর ওপর দিয়ে
মৃত্যুর নক্সী কাঁথার বিছানো ছবি দেখছি ইউটিউবে।
তখনো...সবুজ শ্যাওলার মতো...

নক্সী কাঁথার রঙ এমন না!  

দেখতে দেখতে আমার প্রাণভোমরাও বেরিয়ে আসছে।
বলছে, দ্যাখাও, কিছু দ্যাখাও! 

দেখলাম, একটা সেতু প্রায় চিৎ হয়ে পড়ে গেলো।
বাড়িতে বসে দেখলাম। 
হিমাচল থেকে প্রায় দু-হাজার কিমি
গাড়ির রাস্তায় আমি নেই, তুমি নেই, থাকতেও পারবো না।
শীত, বসন্তে এখানে এসে কেউ মৃতের শ্বাস গুণবে না!  
তোমাকে বলছি, প্রিয়তমা, এবার চুমুর খেলা দ্যাখাও!
একটানে যেন প্যারাশুটের মতো ভাসতে ভাসতে
তোমার কাছে ফিরে আসি। 

এসব কথা কে বলেছে? 
কেউ তো বলেনি! 

গাড়ির চালক বঙ্গবাসী। বয়স বিয়াল্লিশ।
রাজস্থান, নাগপুর আরো কতো কি!
কি? কি মানে কি? 
না, ভুল বলেছি। রাজ্য, কি হয় নাকি?
যাই হোক, সেখানকার লোকজনও মারা গেছে।
সরকার ক্ষতিপূরণ দেবেন।
এছাড়া, কি করবেন? ধস নামা তো আটকানো যায় না! 

তার কি প্রেমিকা থাকতে নেই? গাড়ির চালকের...  
বউ, প্রেম...! 
সাংলা-কিন্নর- রবিবার এক মহাযাত্রা। 
 
সাদা ভাল্লুক, তোমরা আর কি করে পাথর হয়ে থাকবে?
অভিশাপ হাওয়াতে মরে গেছে। এখন দিন অভিশপ্ত হয়ে উঠছে। 
পাথরে খুব ধূম লেগেছে।
পাথর মানুষের মাথা থেঁতলে দিতে দিতে এগোচ্ছে।
সেতুর মাথা, পেট, হাত, সব থেঁতলে দিয়েছে সাদা ভাল্লুকরা।
ভাল্লুকরা কাঠ খেয়ে অঙ্গারের মতো দিন উগড়ে দিলো। 
পাথর থেকে আলো বিতরণ করার কথা দেওয়া আছে না! 

তুমি এখন আমার কাঁধে একটা চুমুর ঢিবি বসিয়ে দিয়েছো সালতুজ! 
আর বলছো, কি সরাতে চায় ভাল্লুকরা?
ভাল্লুকরা কি সরাতে চাইছিলো?
এখন ইচ্ছে করছে, পাল্টা একটা চুমু খেয়ে বলি,
'বাধা'!

ঢিবিটা অনেক দূরে কারো কাঁধের ওপরে ঝুলছে। 
কাঁধ থেকে ভার নেমে গেলে,
ঢিবিটাকে মনে হবে রাধা! 
কি নিষ্ঠুর তুমি ধস, কল্পকৈলাশ, আর  
ঠাণ্ডার ভেতরে জমে থাকা
তরুণীর বেদানা-ঠোঁটের রস... 
ঠিক তোমার মতো উন্মুখ,  তিস্তা! 


যতো জন্মে পদ্য বৈষম্যের--রানা জামান

যতো জন্মে পদ্য বৈষম্যের--
রানা জামান


মূলাগ্রে চরিত্র কালো কালিলিপ্ত মরিচা গতির চাক্কা ধীরে জ্যাম
ছন্দের সাম্পানে অবুঝের দাড় দিকভ্রান্ত হয়ে অগাধ সলিলে
চন্দ্র অভিযানে কূপের বিস্তার সময় সাপের পেটে গপাগপ
কখনো সময় হীরে কখনো বা দ্রৌপদীর শাড়ি বিরক্তি চরমে
আঁকতে আঁকতে কোনো মেনালিসা হয়ে গেলে তা তো নিছক কাকতাল
কবরের রতি নিরবতা গায়ে চুলকানি জ্বালায় বিরক্তি অশেষ
নৈর্ব্যক্তিক গুঁজামিলে কুঁজো চিৎ হয়ে শুতে পারে না কখনো
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ছলকে যায় গ্লাসে থাকা ওয়াসার জল
কত ঝড়ে মাথাভর্তি চুল হয়ে যায় ন্যাড়া তা জানে না জ্যোতিষও
শর্ত মেনে গর্ত খুঁড়ে পানিখনি মুঠোবন্দি হলেও পা আটকা বেড়াজালে
সদানন্দ থাকে নিত্যানন্দে নন্দলালে ভর করে হয় নি বিশেষ জ্ঞানী
যুদ্ধের শরীর গড়ে বেখেয়াল আলতো হলে পঁচতে থাকে ফার্মফ্লেশ
উত্তুরের বায়ু অনেক শরীরে মৃত্যুগ্রাস ক্ষত সৃষ্টি করে জানে তা অনেকে
ষড়যন্ত্র পর্দা ছিড়ে অবয়ব পুরো ঢুকলে লাশ হাটে শিরা জুড়ে
অঢেল ঈগল গুণিতক হারে বেড়ে শুদ্ধ বুড়িগঙ্গা হয়ে যায় আবর্জনা
এই আবর্জনা মনুষ্যত্বে ঢুকে আত্মকেন্দ্রিকতা ক্ষয়ে দিচ্ছে আত্মত্যাগ
স্বার্থকাণা মানুষেরা ব্যাংক লুটে সম্পদ বানিয়ে নাক ডাকে দূর পাতায়ায়
ভেলকি লাগে তেলে মাথে জেনেও যে অধীকাংশ হয়ে যাবে ন্যাপথালিন
নির্লজ্জতা বংশীশীর্ষে চড়ে হেড়ে কণ্ঠে গেয়ে যাচ্ছে রবীন্দ্র সঙ্গীত
ক্ষোভের ভাইরাস করোনা গোত্রের না হওয়ায় নিত্য প্যাদানি প্রভুর
সূর্যের উত্তাপ শোষণ প্রচেষ্টা চিমসে করে দেহ ঠেলে দেয় গহ্বরে
ভাবনাগুলো আজ ঢোল-কলমি হয়ে হুচট খেয়ে থাকে না মুখথুবড়ে
কুজ না থেকেও সোজা হয়ে শুতে গিয়ে ভয় আকড়ে ধরে আষ্টেপৃষ্ঠে
চেয়ে দেখি পুরো সমাজের চিত্র কুজোয় সয়লাব বিষন্ন বিলাস
পদপৃষ্ঠে থেকে দ্রোহহীন চোখে প্রত্যাশায় থাকে জীবন রক্ষার্থে
জীবনের রং ফিকে আজ কর্দমাক্ত পথে হোচট খেতে খেতে নিত্য
ক্ষণস্থায়ী রংমঞ্চে আত্মকেন্দ্রিকতা জন্ম দিয়ে যাচ্ছে লোভ ও হিংস্রতা
অন্যের সম্পদ কেড়ে নিতে ছল চাতুর্যের নয়া কৌশল অসীম
রগান্তরে ঢুকে গেছে চৌর্যবৃত্তি যদিও ক্রমশ যাচ্ছে কমে খাদ্য
পেঁপেসিদ্ধ নিত্য খেলেও নেতিয়ে থাকা শিশ্ন ভার্যা স্পর্শ পেতে কুত্তা
ভায়াগ্রায় মিশে লোভ দাড়ি কমা কাটে ক্ষমতার ক্ষুর দিয়ে দিবারাত্রি
পদভারে পিষ্ট জনতার ঘৃণা ফেভিকলে আটকে রাখে বাক্সবন্দি
নির্বাচন কালে অর্থের তরঙ্গে বাক্সবন্দি ঘৃণা থাকে পজেটিভ
এভাবেই বেড়ে সাপের লেজুড় ঘেরাটোপে নিয়ে যাচ্ছে চন্দ্রসূর্য
ক্ষমতার জালে থেকে হবুমন্ত্রী নিদ্রায় নিমগ্ন ভাগাভাগি গ্রেপ্তে পাবার নিশ্চিতে
ক্ষমতার অন্য প্রাপ্তি বৈষয়িক প্রসার ব্যবসায় অফুরান ঋণ
ঋণে ভারাক্রান্ত হলেও মাফের ট্রেন খাড়া থাকে দোড় গোড়ায় প্রস্তুত
আলোচনা কিংবা দ্রোহের কবিতা অথবা ছড়ার থাপ্পড়
শেয়ালের মতো মল ত্যাগ করে ফের খেতে থাকে গাব
বালিতে ডুবিয়ে মুখ ভেবে থাকে হচ্ছে না প্রলয়
ধুকতে ধুকতে শুঁকতে শুঁকতে নেড়ি কুত্তা দৌড়ে থাকে আমরণ
বাঁক বদলের নয়া মোড়ে কাক না কোকিল আসে না তো কল্পনায়
চড়কা নিজ হাতে থাকলে পছন্দের শাড়ি গড়া বেশ আরামের
শাড়ি গড়ি নানা রঙের ঢঙও থাকুক বিচিন্তা জুড়ে আদিগন্ত
ভূতের নিশানা থেকে সারটুকু নিংড়ে নয়া পথ রচনায় থাক দৃঢ় বজ্রমুঠো
দানবের দাঁত যতই সূচালো হোক না কেনো তা ভাঙ্গে বজ্রকিলে
মূলত্রের থুতনি গোল কিংবা ভাঁজ অর্থহীন যদি থাকে ভাংগা চুড়া
ঘুড়ি কৌশলের প্যাঁচ ছেড়ে গেলে ভোকাট্টা ক্ষণিকে রেখে আফসোসটা
সাপের পাঁচ পা যতই যাক না দেখা তদন্তের গেরো ঢিলা থাকলে লবডঙ্কা
স্বজনপোষণ নীতি দাঁড়িপাল্লা কাত রাখে সব দণ্ডধারী
বঞ্চনার তীর সর্বকালে করছে এফোঁড়ওফোঁড় খরগোশের বুক
কেউ প্রতিবাদ জানালে খড়গ নেমে আসে উল্টো বিভিন্ন রকমে
বিচারের বাণী নিভৃতে অনাদিকাল থেকে কাঁদছে এই বঙ্গভূমে
যে যায় লঙ্কায় সে রাবন হয়ে মেতে থাকে সীতা হরণে কেবল
চারিদিকে এক দূর্ভেদ্য প্রাচির গড়ে মোসাহেব রাখে দেহ ঘিরে
কবিতায় গল্পে এতো প্রতিবাদ কোনো অনুষ্ঠানে পাঠে সীমাবদ্ধ
চেহারা দর্শনে আয়না উপকারী ভেঙ্গে গেলে মূল্যহীন হয়ে ভয়ানক তীক্ষ্ণ
সাম্যবাদে তত্ত্ববন্দি থেকে পুঁজিবাদে বৈষম্যের ঘোড়া বাড়ন্ত সংখ্যায়
যতো পদ্য জন্মে বৈষম্যের ততো হাত চালু থাকলে আর্তনাদ কমে যেতো আর্যকালে।


***লেখক পরিচিতি

মোঃ সামছুজ্জামান ভূইয়া অতিরিক্ত সচিব হিসেবে ২০১৯-এ অবসরে গিয়েছেন। রানা জামান নামে লেখালেখি করছেন। প্রথম কবিতার বই-এর প্রকাশ ১৯৯৯ খৃস্টাব্দে। এ পর্যন্ত ৯৬টি বই বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

নিজ জেলা: কিশোরগঞ্জ, বাংলাদেশ।

লেখকের উল্লেখযোগ্য বই:

ক) ছোটগল্প: ক্রীড়নক, পুষি বেড়ালের বিদ্রোহ,

খ) অণুগল্প: অল্প কথার গল্প-১ ও ২

গ) কাব্য: তোমার নয়ন কাকচক্ষু জল(সনেট),

ঘ)উপন্যাস:বৃক্ষমানব; রোবো সক্রেটিস,

ঙ) ছড়া: ছোটদের-আগডুম বাগডুম, জল পড়ে পাতা নড়ে, ইত্যাদি; বড়দের-ছায়া চুষে কায়া, একান্ত শিশিরগুলো,

চ) মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক: ছোটগল্প-একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের গল্প

উপন্যাস-গেরিলা, উত্তাল একাত্তর, মুক্তিযোদ্ধারা কখনো হারে না,

ছ) ছোটদের বই: ভূতের কাণ্ডকারখানা, পোড়োবাড়ির ভূত,

জ) ইংরেজি: Lost Love Twinkle Rhymes।




তুষার ভট্টাচার্য্যর তিনটি কবিতা

তুষার ভট্টাচার্য্যর তিনটি কবিতা --
     
         ১ ভালবাসার জানালা 
--------------------------------------------------------

এই বসন্তে গন্ধরাজ, মাধবীলতার মন মাতানো গন্ধ নিয়ে
 সূর্যাস্তের অন্ধকারে
যে নীরবে উঠে আসে নিরালা  দুয়ারে
তার প্রতি পুষে রাখিনা কোনও ঘৃণা,
অভিমান ;
 এক মুহূর্তে তার জন্য  খুলে দিই পড়ন্ত  রোদ্দুরে ভিজে যাওয়া
রক্তিম ভালবাসার জানালা  কপাট  l


               ২ বর্ষার বিষণ্ণ চাঁদ
---------------------------------------------------------

বর্ষার বিষণ্ণ চাঁদ চুপি চুপি জানালায় উড়ে এলে
ভাঙা বুকের পাঁজরে বেজে ওঠে শুধু
ব্যর্থতার নাম গান ;
আর তখনই আমি মনের দর্পণে তুলে আনি ভোরের কৈশোর,
আকাশ বাড়িতে তাকিয়ে দেখি মেঘের তুলিতে আঁকা শ্যামলা
 লাজুক কিশোরীর  টলটলে মায়াবী মুখ l


                ৩ সুরের সাম্পান
-------------------------------------------------------

কোনও গোপন  অভিমান নয়
 ভ্রু-পল্লবে প্রশ্ন চিহ্ন নয়
আজ অমল ধবল জোছনা রাত্তিরে
আবিল হৃদয় জুড়ে
জেগে উঠছে শুধু নদীর কলকল
ঢেউয়ের মতন ভালবাসার
সুরের সাম্পান l

চঞ্চল সেখের দুটি কবিতা

চঞ্চল সেখের দুটি কবিতা --

১ ওরা করা

কত সুখ কত দুঃখ কষ্ট বেদনার আর্তনাত অবিরল হৃদয়ে তাদের,
ওরা কারা?
যারা জীবিকার জন্যে বাইরে থাকে(কেরালা মুম্বায় দিল্লি ও অন্নান্য দেশ বিদেশে),,জন্মভূমি ছেড়ে৷
এখানে শুধু কেরালার কথাটায় বলি,
এটা কবিতা নয়! বিরহের  অক্লান্ত শ্রম প্রয়াসের অশ্রুভাষা,,,,
দরিদ্র সভাবী নয় অভাবী শ্রমিক শ্রেনীর কথা,
ওরা কারা?
এরা বাইরে যখন আসে ,মায়ের চোখ ভেজা কান্না,
পিতার বুকফাটা বেদনা,,তার উপর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা, 
 বিরহিণীর বুকভরা বুবাকান্না বউটার দিকে চোখ রাখা যায়না,
মায়ের কোলে ছেলেটি আঙুল চেপে ধরে ,
,,আঙুলটা ছারিয়ে চেপে ধরি ছোট টিকিট লম্বা রেলগাড়িটার ডাণ্ডি৷
ওরা কারা?
তিনদিনের রাস্তা চালু টিকিটের লাইন বড় লম্বা ভিড়ে ঠেলাঠেলি পটল মূলোর ঝাকা সম,
রেজাভভিষান মেলে কখনও দুঃসাধ্যে৷
ওরা কারা?
তারপর তিনদিন পর পৌছায় কেরালায়,
শুখনো ম্লান মুখ তার উপর কাজ জুটবেকি তার দুঃচিন্তায় মগ্ন, মনে ইশ্বরের আরাধোনা ,
এসেছি ভবিশ্য উদ্দেশ্য নিয়ে অথবা ৠনের বোঝা মাথায় নিয়ে৷
ওরা কারা?
আগেরমত কাজের বাজার ভাল নয়,(ডালের থেকে বাঁদর বেশি হলে যা হয়)মুজুরি যা হয় হোক অল্প মালিয়াম শব্দে  বস পানি উণ্ডো(কাজ আছে)৷
ওরা কারা?
তার পর হাড় ভাঙা অকান্ত প্ররীশ্রম যতদিন থাকবে,
তাও আবার কাজ হলে হয়৷
ওরা কারা?
'বাংলার মা মাটি মানুষ ,মমতা তুমি কতটা জান এদের কথা,এদের হৃদয়ের ব্যথা,দরিদ্রের ক্ষুধা জালা৷
ওরা কারা?
বাংলার জননী তুমি খবর রেখছ সরকারী কর্মীদের ,
বেতন বারালে পূজোয় দিচ্ছ বোনান মাস গেলেয় মায়নি,
হিংসে নেই তাতে,যত দুঃখ গরীব চাষী অভাবি মানুষের৷
ওরা কারা?
কলকাতাকে আধুনিক উন্নত শহর বানানোর  প্রতীশ্রুতির ভাষন দিচ্চ সমীরন বার্তায়,
 বেকার যাযাবরেরমত জীবন খবর কে নেবে ৷
ওরা কারা?
 তাদের হৃদয়ের বিরহ বার্তা কে করিবে নিবেদন
ওগো বঙ্গবাসি শ্রেষ্ঠ কবিতা আবৃত্ত কারীরা ,
যেমন 
ব্রততী, বিশাখা,মৌসুমি,মলয়  পৌচ্ছেদাও তোমাদের শুললীত কষ্ঠে আবৃত্তের কোন বৈশাখী অধিবেশনে৷ 
বাইরে থাকা অভাবি শ্রমজীবিদের পাশে এসে কে দাঁড়াবে, সেই বাউল কে গাবে বঙ্গের মঞ্চে মঞ্চে৷ এরা কারা?
এদের মধ্যে আমিও এক অসহায় পথিক৷ 
ওরা কারা?
ওরা কারা?.....


২ শুধু কবিতার জন্য ঋণী 

কবিতার জন্য পৃথিবীর কাছে বড় ঋণী
বাস্তবের বাস্তবায়ন যা শিখিয়েছে সেটা বড় কঠিন৷
ভেবে ছিলাম কিছু কবিতার জন্ম দেবো এবার সংসারের গণ্ডি পেরিয়ে ,

কিন্তু সে সংসার পথের পাঁচালি হতে সময় লাগবেনা সেটাও আমি জানি৷
এই বিশাল পৃথিবীকে জানার ইচ্ছা ছিল
সময় হয়ে ওঠেনি
কিছু কবিতা পূর্ণতা পেলনা 
 সংসার সংবিধান মাঝে মধ্যে ভয় দেখালেও 
স্বপ্নটাকে কেড়ে নেয়নি ৷
গৃহে মোর প্রত্যহ মহোৎসব শুরু হয় ছোট্ট ছেলে মেয়েদের কলতানে ৷
যা শিশুদের  নবজাত নবকল্লোলে সৃষ্টি হয় অনবদ্য কবিতা৷
যা বাস্তবের সস্তা হাটে অমূল্য
শুধু কবিতার জন্য আমি এদের কাছে বড় ঋণী

অস্থিরতা-- শর্মিষ্ঠা ঘোষ

অস্থিরতা-- 
শর্মিষ্ঠা ঘোষ

মেঘলা চোখ হতে
মল্লার রাগে গাল বেয়ে 
তিস্তার কলরোল 
ছন্দমর্মর
বৃক্ষ জুড়ে কাতর মায়া
               হে ঈশ্বর 
ছৈ সৃষ্টি সানাই মৃত্যু 
শূন্য মিনার স্বপ্ন কিনার
লন্ডভন্ড রাত
মোহের মলাট
পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা পেনসিল 
হিজল টানে হিজিবিজি 
            পিঠোপিঠি তুমি 
লক্ষ স্ফটিক স্বপ্ন 
প্রপাতে প্রপঞ্চ 
লাবণ্যধার 
অস্থিরতা... 

***শর্মিষ্ঠা ঘোষ
উঃ২৪ পরগণা 
7003116975

পরিচিতি : জন্ম কলকাতায়। বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা ও লেখালেখি শখ। কবিতা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সাময়িক পত্রিকায়। দৈনন্দিন জীবনের যন্ত্রণা, প্রেম, পাল্টে যাওয়া রঙ লাগে কবিতায়।

পরম্পরা--নারায়ণ রায়

পরম্পরা--
নারায়ণ রায়

ছোট্টবেলায় পাড়ার নীরেনদার দোকানে
বোয়েম ভর্তি সাজানো লেবু লজেন্স।
পরাধীন মনটা চাইতো, কিনি আর খাই,
বাবা বলতেন, ওগুলো খেলে পেট খারাপ হয়।
মনে মনে ভাবতাম, যখন স্বাধীন হ'ব
তখন দু'পকেট ভরে কিনবো আর খাবো,
তখন তো জানতাম না যে, 
স্বাধীন আমি কোনদিনই হ'ব না।
আমার বাবাও কোনদিন স্বাধীন ছিলেন না,
তার বাবাও ছিলেন না।

কলেজে পড়ার সময়ে বন্ধুরা বলতো
চল দিলখুসের কাটলেট খাবো,
মুখে বলতুম ক্ষিধে নেই,
আর মনে মনে ভাবতুম, যখন ক্ষিধে পাবে,
তখন দুপ্লেট ভর্তি কাটলেট 
আর কবিরাজি খাবো।
তখন তো জানতাম না যে,
ক্ষিধে আমার কোনদিনই পাবে না।
এখন মনে পড়ে, আমার বাবারও
কোনদিন ক্ষিধে পেত না,
তার বাবারও ক্ষিধে পেত না।

সঞ্চালি বলত, তোকে আমার খুব ভালো লাগে,
আমি  বলতাম, আমার ভালো লাগে না।
মনে মনে ভাবতাম যখন আমার খুব প্রেম পাবে,
তখন তোকে আমি খুব, খুব করে ভালবাসবো,
তখন তো জানতাম না যে, 
আমার কোনদিনই প্রেম পাবে না।
আমার বাবা-মাকে কোনদিন 
পাশাপাশি বসে গল্প করতেও দেখিনি,
তাদের বাবা-মা'দেরও 
নিশ্চই কোনদিন প্রেম পেত না!

বিয়ের পর বৌকে বললাম, পুজোর ক'দিন
নাইবা ঠাকুর দেখলে! বরং ওই কদিন
কাজ করলে কিছু টাকা পাবো,
তোমার একটা শাড়ি হবে।
ঠাকুর না হয় পরের বছর দেখবো।
তখন তো জানতাম না যে,
ঠাকুর আমার কোনদিনই দেখা হবে না!
আমার বাবা-মাও কোনদিন 
ঠাকুর দেখতে বেরোয় নি,
তাদের বাবা-মাও
কোনদিন ঠাকুর দেখে নি।

ছেলে বললো, বাবা ইলিশ মাছ খাবো,
আমি বললাম, দুর বোকা ইলিশ খেলে
পেটের ব্যমো হয়।
তার চেয়ে বরং চল, আজ রাতে আমরা
বেগুন পোড়া দিয়ে মুড়ি খাই।
মনে পড়ে বাবা বলতেন, 
কারখানার লক আউটটা উঠলেই 
একটা মাছের মুড়ো কিনবো,
মাছের মুড়ো দিয়ে, পুইশাক খাবো।
বাবার আর কোনদিনই মুড়ো দিয়ে
পুইশাক খাওয়া হয়নি,
তার বাবারও নিশ্চই খাওয়া হয়নি।

অথচ বংশের পরম্পরা তো মানতেই হবে,
আজ যখন আমি অসুস্থ হয়ে প'ড়লাম;
জ্ঞান হয়ে দেখি, শুয়ে আছি
হাসপাতালের দোতলার তিন নং বেডে,
কি আশ্চর্য্য আমার বাবাও ছিলেন 
এই হাসপাতালের এই একই বেডে,
আর সেদিনও ছিল আজকের মতই 
পাশের পর্নমোচী গাছটা পত্রহীন।
বাবা আর বাড়ি ফিরে যাননি,
শুনেছি তার বাবাও এই হাসপাতালের 
এই বেডেই........।
তবে কি আমিও..........?

অনিন্দ্য পালের দুটি কবিতা

অনিন্দ্য পালের দুটি কবিতা --

ফুলের সঙ্গে একান্তে 
=========================== 
জানালার ঠিক সামনেই কাঞ্চন ফুলের গাছে 
আগুনের মত ফুটে আছে ফুল 
ওরা আমায় চেনে না আমাদের পরিচয় হয়নি কখনও 
যদিও একে অন্যকে দেখেছি অনেক বার 
যদিও একটা লম্বা আলোর তলোয়ার পাতা আর ফুলের ফাঁক দিয়ে ঠিক এসে পড়ে আমার চিবুকে 
আমরা কেউ কাউকে আদর করিনি কখনও... 

আগুনের রং লাল আর লাল আমার ভালো লাগে 
ফুলের রং আগুন, আগুন আমার ভালো লাগে
 
একা যখনি তাকিয়ে থাকি লালকাঞ্চন ফুলের দিকে  
জ্বলতে জ্বলতে ফুরিয়ে আসে আগুন উড়ে আসে 
ছাই ঢাকা পড়ে যায় স্মৃতিময় সৌধের বাগান 
শুধু লেগে থাকে রেশম পাতার রং... 
 
আমি আবার আগুন চেয়ে থাকি 
ফুল চেয়ে থাকি 
আমার জানালার পাশে একা দাঁড়িয়ে আছে 
আমার একলা সময়ের আগুন।

২ চলে গেলি সাধন
======================= 
চলে যায় সবাই, যেতে হয় কখনো না কখনো 
সময়ের সীমা সবাইকে যেতে হয় পার হয়ে 
তাই বলে মাত্র চুয়াল্লিশে? 
যে বয়সে 'বাবা' হল অন্য এক বন্ধু আমার 
যে বয়সে 'চাকরি' পেল আরও কত বন্ধুরা
অথচ তুই চলে গেলি সেই সকালেই? 
এত কী তাড়া ছিল? ছিল কত সময়-সংক্ষেপ? 
চলে গেলি দুপুর গড়াবার আগেই ... 

জানি এসব প্রশ্নের কোন উত্তর পাব না কখনও 
এসব প্রশ্নের উত্তর হয়ও না হয়ত, তবু 
বন্ধুতা আইন মানে না, 
মানতে চায় না দিনের আলোর মত স্বচ্ছ সত্যিটাও, 

তোর ছবির উপর চেপে বসা মালার ফুল গুলো 
দুর্গন্ধময় ফাঁসির দড়ি 
বিষধর সাপের মত জড়িয়ে থাকা ওই সব পুষ্পচিহ্ন 
অসহ্য শত্রুর মত মনে হয় 
ভুলে যাই, ওরাও চলে গেছে তোর মত অদৃশ্য গন্তব্যে 
এবং ছিঁড়ে আর ছুঁড়ে ফেলতে চাই সব লৌকিকতা 
স্মৃতিমেদুরতা, 
কিন্তু চোখ পড়ে তোর মুখের উপর, চোখের উপর 
খেলা করে যায় দুষ্টামি, সেই স্কুলবেলার মত 
রক্ত জল হয়ে আসে, 
মেরুদণ্ড ঝুঁকে পড়ে ধ্বস্ত গাছের মত 
চারদিকে দিনের আলোর রং হয়ে ওঠে ঘন কালো 
আর সেই অন্ধকার থেকে হঠাৎ বেরিয়ে আসিস তুই 
সাইকেল থামিয়ে হেসে বলিস, 
"চল, পিছনে বোস, দেরি হয়ে গেল তো! 
স্যার পড়ানো শুরু করে দেবে এবার ...
[30/06, 9:40 PM] Tapas: আমার পরিচিতি // অনিন্দ্য পাল 
======================
জন্ম ১৯৭৮ সালে। বাস দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার চম্পাহাটি তে। পদার্থবিদ্যায় সাম্মানিক স্নাতক, বি এড। পেশায় হাইস্কুলের শিক্ষক। লেখা লেখি শুরু কলেজের দিনগুলোয় যদিও প্রকাশ অনেক পরে। দেশ,  কৃত্তিবাস, আনন্দমেলা, প্রসাদ, কবিতাপাক্ষিক, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, বিজ্ঞানভাষ, তথ্যকেন্দ্র,  নিউজ বাংলা, উৎসব, অপদার্থের আদ্যক্ষর, শ্রমণ, রা, কল্পবিশ্ব, অনুবাদ পত্রিকা, প্রভৃতি অনেক পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। 
"সুখবর" পত্রিকায় শতাধিক বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়ে প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। 
"তোর মত হলে অন্ধকারকেও ভালোবাসি", "জলরঙের ওড়না " ও "সমুদ্রে রেখেছি সময়" ও " আমি এসেছিলাম " নামে চারটি কাব্যগ্রন্থ আছে। 
"ছোট্ট সবুজ মানুষ" প্রকাশিত প্রথম বিজ্ঞান প্রবন্ধের বই।  
সাপলুডো নামে একটা পত্রিকার সম্পাদনা করেন।
ঠিকানা*
======
অনিন্দ্য পাল 
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল 
গ্রাম -- জাফরপুর 
পোঃ-- চম্পাহাটিি 
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর 
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা 
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 
Mob: 9163812351
mail-- biltupal2009@gmail.com

চাঁদ-চরিত--কৌস্তুভ দে সরকার

চাঁদ-চরিত--
কৌস্তুভ দে সরকার

দক্ষিণের মতো এখনো উত্তরবঙ্গের চাঁদ 
অতটা সাহসী হয়ে উঠতে পারেনি
ছবিতে
কবিতাতে
চিন্তা-চেতনায়

এখনো চাঁদের বুক ওড়নায় ঢাকা
মুখে সুশ্রী কারুকাজ
পাট পাট চাঁদের পোশাক
হাবভাবে বিখ্যাত হবার করুণ প্রবণতা
আর্তি
আর্তনাদ

কুয়াশার চাদর সরিয়ে
এখনো সুদিন ফেরেনি চাঁদের ভাগ্যাকাশে

সামান্য কিছু একাউন্ট খুলতে পেরেছে চাঁদ
কলকাতার দিকের কিছু ব্যাংকে
.

দুর্বাসার বর--রমা গুপ্ত

দুর্বাসার বর--
রমা গুপ্ত

এসেছে দুর্বাসা কুন্তিভোজ নগর
সেবা দাও বলে ডাকেন উচ্চস্বর।
মন্ত্রী শশব্যস্ত বার্তা দিলেন কুন্তিভোজে,
দুর্বাসা এসেছেন হেথা আশ্রয়ের খোঁজে।
রাজা হন চিন্তাগ্ৰস্ত কি হবে এবার,
এ মুনি সহজ নয় ক্রোধ যে দুর্বার।
সেবা ত্রুটি হলে পরে রক্ষা নাই আর,
অভিশাপে বিনাশ হবে
রাজ্যপাট তার।
রাজকার্য যা  ছিল ফেলে সমস্ত,
সত্বর এলেন রাজা হলেন ব্যস্ত।
হস্ত পদ ধুয়ে বললেন মুনিবর,
থাকতে চায় হেথা প্রায় এক বৎসর।
ইচ্ছামত করব কর্ম থাকব স্বাধীন,
দিও শুধু এক সেবক আমার অধীন।
সেবা হেতু যা কিছু বলবো যখন,
পাঠিয়ে দিও তা হয়ে সযতন।
ভোজরাজ ভীতত্রস্ত, কি হবে উপায়,
দিশেহারা হন রাজা, হন নিরুপায়।
হেনকালে কুন্তি এসে জানায় পিতারে,
চিন্তা করো না আমি সেবিব মুনিরে।
কুন্তিভোজ বলেন পুত্রি  জানো নাকো তারে,
ত্রুটিমাত্র হলে মুনি শাপিবে তোমারে।
কুন্তি বলেন পিতা শান্ত হোন এই ক্ষণে,
ত্রুটি না হবে সেবায় নিশ্চিত জানি মনে।
মুনি কাছে কুন্তি গিয়ে বলেন তখন,
আপনার সেবা আমি করব যতন।
মুনিকে নিয়ে কুন্তি এলেন একটি ঘরে,
সাজিয়ে দিলেন দ্রব্য নানা উপাচারে।
যত্ন করে পাতেন আসন, শয্যার বিছানা,
জল  ফল ভোজ্যদ্রব্য বসন কয়খানা।
তারপর করজোড়ে বিনতির সুরে,
বললেন কুন্তি তবে দুর্বাসা মুনিরে।
দ্বার বাইরে সদা আমি থাকবো উপবিষ্ট,
সেবা লাগি বলবেন যা থাকে অবশিষ্ট।
এইভাবে কুন্তি সদা করেন সেবাব্রত,
দুর্বাসাও পরীক্ষা ছলে করেন বিস্তর বিব্রত।
একে একে পরীক্ষায় জয় হলেন কুন্তি,
দুর্বাসারও মনে তাতে বড়ই প্রশান্তি।
এইভাবে সময়কালে বছর হলো পূর্ণ,
বিদায় নেবেন মুনি কুন্তি বিষন্ন।
কুন্তিকে স্নেহ সুরে বললেন মুনি,
তুমি হলে ভক্তিমতি সুশীলা রমণী।
তোমার সেবায় আমি হয়েছি যে প্রীত,
বর তুমি নাও চেয়ে দেবো  মনোমত।
করজোড়ে বলেন কুন্তি বর নাহি চাই,
সেবায় হয়েছেন সন্তুষ্ট খুশি আমি তাই।
ভোজ রাজ্যে চরণধূলি পড়েছে আপনার,
তাতেই রাজ্য কল্যাণ, এটাই বর আমার।
প্রসন্ন হয়ে মুনি বলেন কুন্তিরে,
এই একটি মন্ত্র নাও, দিলাম তোমারে।
যত্ন করে সারাজীবন রাখলে স্মরণ,
মন্ত্রবলে মনোবাঞ্ছা হবে যে পূরণ।
এই মন্ত্রবলে তুমি পছন্দ মতন,
যে দেবতারে করবে স্মরণ আসবে তখন।
মনে মনে চাও যদি তাঁর মত সন্তান শক্তিধর,
অমনি লভিবে তুমি সে সন্তান সত্বর।
এই বলে মুনি তবে নিলেন বিদায়,
রাজা প্রজা মন্ত্রী সবে পেলেন স্বস্তি তায়।
একদিন  ভোরে কুন্তি গিয়ে গঙ্গাস্নানে,
অর্ঘ্য দিয়ে পূজিলেন সূর্য নারায়ণে।
অকস্মাৎ স্মরণে এলো দুর্বাসার বর,
পরীক্ষা হেতু মন্ত্র উচ্চারণ করলেন সত্বর।
অমনি সন্মূখে এসে সূর্যনারায়ণ,
সমর্পিল হস্তেতে তাঁর কাঙ্খিত পুত্রধন।
ভয়ে বিস্ময়ে কুন্তি বলেন এ যে বিষম দায়,
আমি যে কুমারী দেব কি হবে উপায়।
লোকলজ্জা হেতু আমি নেবো না এ  দান,
আমি যে রাজকন্যা আমার  না রবে  মান।
ভুল বুঝে মন্ত্র পাঠের এ কি পরিণাম,
কলঙ্কিত হবে মোর পিতার সম্মান।
কুন্তি তুমি কুমারী! বিস্মিত সূর্য নারায়ণ,
তবে কেন করলে বাঞ্ছা পুত্রতপোধন!
হায়। এখন এ সন্তান ফিরাবো কেমনে,
কাঙ্খিত ধন ফিরালে দগ্ধিবে জীবনে।
একবার যদি কিছু করা হয় দান,
ফিরায়ে দিলে হয় দানীর অপমান।
আমার শক্তিতে সৃষ্ট এ বীর সন্তান,
আমারই কবচ কুন্ডল রক্ষিবে তার প্রাণ।
জানবে সে মহাবীর নাম হবে কর্ণ,
জগতে মহান হবে দান হবে ধর্ম।
এই বলে সূর্য নারায়ণ হলেন অন্তর্হিত,
একলা কুন্তি সন্তান কোলে দাঁড়িয়ে স্তম্ভিত।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় কুন্তি ভাসছেন অশ্রুজলে,
মনস্থির  করে শেষে অশ্রু মোছেন আঁচলে।
গঙ্গার অদূরে দেখেন নলিনীর দল,
সেথা হতে কুন্তি পদ্ম তুলিলেন সকল।
তারপর ঝুরি মধ্যে পদ্মসকল বিছায়ে,
সন্তান রাখেন তাতে যতনে সাজায়ে।
অনেক আদর করে সাশ্রু নয়নে,
ভাসিয়ে দিলেন তারে অতি সযতনে।
ভুলের কলঙ্ক হতে এভাবে নিস্তার,
গোপনেই রইলো মনে সে ব্যাথার ভার।

***লেখিকা রমা গুপ্ত
জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার দূর্গাপুর।
ছোটবেলা থেকে কবিতা, গল্প, আঁকা, গান, ধর্মীয় পুস্তক পড়ার ঝোঁক ছিল।
বরাবরই লেখার সঙ্গে যুক্ত।
লেখিকার রচিত তিনটি ধর্ম পুস্তক আছে। কবিতাও লেখেন অনেক দিন থেকে।বর্তমানে কোলকাতায় থাকেন।

ঠিকানা - তপোবন
বিজয়কৃষ্ণ পল্লী
বাস স্টপ কারবালা।
পোঃ - নরেন্দ্রপুর
দক্ষিণ ২৪ পরগণা
পিন নং- ৭০০১০৩

তোমায় আমি--আব্দুল জলিল

তোমায় আমি--
আব্দুল জলিল

আমি তোমায় দেখে ছিলাম গঙ্গা নদীর পাড়ে
তুমি তখন দাঁড়িয়ে ছিল অবগন্ঠন পরে।
কচুরিপানা ফুলের মতো তুমি
ভাসছো গঙ্গা নদীর'পরে
দেখলাম আমি ভেসে যাচ্ছ দূরে
যেতে যেতে স্পর্শ করে গেলে।

গঙ্গা নদী কোথায় চলে বয়ে
কচুরিপানায় জলের বিন্দু লেগে
আনমনে চেয়ে আছি শুধু 
তুমি কখন ফিরে চাইবে আমা পানে,
কচুরিপানা যেমন মিশে জলে
তেমন করে এসো হৃদয় মাঝে।

তোমায় চেয়ে চেয়ে দেখছি আমি তাই,
শিশির বিন্দুর মতো ঝরে না যায়।
তোমার অঙ্গে জলের বিন্দু পেতে 
আমি চাই তোমার মধ্যে মিশে যেতে
চাঁদ যেমন আকাশের বুকে মিশে।

তুমি রবে আমার তরে-----আমি না হয় ক্ষয়
কচুরিপানা ফুল শুধু নদীর ফুল নয়,
নদীর সৌন্দর্যও বাড়ায়
তোমার পরশে আমার জীবন হলো চঞ্চল;
অন্ধকার ঘনিয়ে এলো----
হারিয়ে গেল কচুরিপানা ফুল
বুঝিয়ে দিলে তোমার ভালোবাসা।

Wednesday, 6 July 2022

তৈমুর খানের গুচ্ছ কবিতা




তৈমুর খানের গুচ্ছ কবিতা --

কবিতারা উঠে দাঁড়াতে চায়
 

তোমার অসুখের বিছানার পাশে
আমার কবিতারা বসে আছে
কোথাও যায়নি ওরা
জানালার চাঁদে হাত বাড়ায়নি ওরা
স্নেহান্ধ পিচ্ছিল কান্না চেপে
সারারাত জেগে জেগে আছে।

কী বলল ডাক্তার?

হয়তো সেরে যাবে
তিনমাস বিশ্রামে তারপর একটু একটু করে

কে দেখবে সংসার? আমরা সবাই হাওয়া খাব?
ছেলেমেয়ে আর শীতের কুয়াশার হাত ধরে
রোদের অপেক্ষা করে করে আমরা কি বিপ্লবী হব?

মৃত্যুকে পুষে পুষে রোজ বড় করি
মৃত্যু কি কোনও দিন আলো হতে পারে?
ডাক্তারের কাছে কোনও সমাধান নেই
শুধু অ্যানাস্থেসিয়া আর ডেটলের গন্ধ ঘরময়
সেলাইন চুপচাপ শরীরে ঢোকে
যন্ত্রণারা উপশম চায় আমার শব্দের কাছে 

কবিতারা উঠে দাঁড়াতে চায়
সুসংবাদ এসে যদি দরজা খুলে ডাকে!


জানোয়ার
 

আমরা স্বর্গের দিকে যেতে যেতে দুইপাশে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলাম
আমরা সবাই দেবতা—চারিপাশে আমাদের শরীরের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছিল
চারিপাশে সবাই আমাদের দেখছিল আর ফুল ছুঁড়ে অভিনন্দন জানাচ্ছিল

আমাদের কোনও ভ্রুক্ষেপ ছিল না সেদিকে 
হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছিলাম স্বর্গযানে
দুইপাশে মরচেধরা প্রাণী—ক্ষুধার্ত—ভঙ্গুর—তৃষ্ণার্ত—হাহাকারপ্রিয়... 
দুইপাশে কসাইয়ের দোকান—
নিরন্তর ছুরি শান দেওয়ার শব্দ
নিরন্তর দুর্বোধ্য ভাষার চিৎকার... 

আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা
স্বর্গে যেতে যেতে দেখছি এসব;
আমাদের গাড়ির চালক জানাল:
এরা সবাই বিভিন্ন জাতের প্রাণী—
পৃথিবীতে এদের জানোয়ার নামে ডাকা হয়!

            
দুপুরের ডাকঘর 
    

দুপুর এসেছে,একটু পর চলে যাবে
তাকে কিছুই বলার নেই
অনেক মৃত সকাল, শিশির ভেজা ভোর
স্মৃতির আলোয় পড়ে আছে

পাখিদের কলতান উড়ছে কোথাও
কোথাও বিগতা কুমারী শিস দেয় আজও
শরতের শালুক ফোটা দিঘি আর নেই
দিঘির বকেরা সব মৃত! মাছগুলি চলে গেছে অন্যকোনও সমুদ্রের দিকে....

এখন হৃদয় পেতে ছায়া খোঁজা দিন
বিশ্রামে নীরব হয়ে থাকা
মাটি ফাটা তাপে বয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস
শীত আর কুয়াশায় লেখা জীবনের শেষ চিঠি
নিয়ে এসেছে দুপুরের ম্লান ডাকঘর
        


স্পর্শ
    

এই হাত, আমারই হাত, আমিই স্পর্শ করি
সমস্ত শরীর জুড়ে এখনও সেই স্পর্শের শিহরণ পাই
 যে আলো নিভে গেছে বহুদিন
 এখনও তার উজ্জ্বলতা আছে
 এখনও অক্ষরগুলি পড়ে নিতে পারি

হৃদয় পাথর হয়ে গেছে, যে শোকে পাথর হয়
সব বেদনার অশ্রুগুলি
পথও হারায় পথে
 ঠিকানাও বদল হয় অন্য কোনও ঠিকানায়

একটা শূন্যের মতো পৃথিবী গড়াতে গড়াতে
দিনরাত্রি প্রসব করে শুধু
ফেল করা ছাত্রের মতো আমরা শুধু অংকে শূন্য পাই
ঘর বানাতে বানাতে প্রতিদিন ঘর ভেঙে ফেলি 
প্রদীপ জ্বালাতে জ্বালাতে প্রতিদিন ডাকি অন্ধকার

স্মৃতির কাঁচ মুছতে মুছতে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়
 শুধু হাতখানি স্পর্শ ধরে রাখে
 যে স্পর্শ তার একান্ত ঈশ্বরীর...
            

সোনার মঙ্গলকাব্য


রাতদিন সোনার হরিণ শিকার করি
আর হরিণের মাংস আনি ঘরে
ফুল্লরা রান্না করে দেয়
আমি ও আমার সন্তান মিলে খাই

সোনার সংসারে আমরাও সোনার মানুষ
রোদ্দুরে চিকচিক করে শরীর আমাদের 
অরণ্য প্রত্যহ হরিণ প্রসব করে

সোনার তীর-ধনুক হাতে যখন দাঁড়াই
আমাদের গল্পগুলি পাখা মেলে ওড়ে
গল্পগুলি খুঁজে ফেরে মুকুন্দরামের ঘর

কত যুগ পার হচ্ছে, সোনার হরিণ হচ্ছে মায়া
আমরাও বদলে যাচ্ছি লোহায় পেতলে
ফুল্লরাও পাল্টে হচ্ছে ফেলু-ফেলানিতে

তীর-ধনুকগুলি এখন বন্দুক-পিস্তল
অরণ্য নগর-রাষ্ট্র সমূহ শিকারভূমি এই সভ্যতার
সন্তান-সন্ততি মিলে আমরা সব মরীচিকা খাই 



***নব্বই দশকের কবি ও গদ্যকার। প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'কোথায় পা রাখি' (১৯৯৪) ।কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ :বৃত্তের ভেতরে জল, জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা, উন্মাদ বিকেলের জংশন, স্তব্ধতার ভেতর এক নিরুত্তর হাসি, নির্ঘুমের হ্রস্ব ধ্বনি, আকাঙ্ক্ষার ঘরের জানালা, সভ্যতা কাঁপে এক বিস্ময়ের জ্বরে ইত্যাদি । পুরস্কার পেয়েছেন :কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার, দৌড় সাহিত্য পুরস্কার, নতুনগতি সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি ।ঠিকানা :
তৈমুর খান, রামরামপুর (শান্তিপাড়া), ডাকঘর :রামপুরহাট, জেলা বীরভূম, পিন কোড ৭৩১২২৪, পশ্চিমবঙ্গ ।ফোন নম্বর ৯৩৩২৯৯১২৫০

সমুদ্র দেখা--দেবকুমার মুখোপাধ্যায়

সমুদ্র দেখা--
দেবকুমার মুখোপাধ্যায়

সমুদ্র দেখিনি আমি অনেক বছর,
শুনে পড়ে কল্পনায় বহুবার দেখা হয়ে গেছে।
অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এইবার মুখোমুখি,
বিকেলের পড়ন্ত আলোয়
দূর সমুদ্রের নীল ভালো লাগে,
যা কিছু দূরের তাই নীল
যেমন আকাশ।

মনে হল সমুদ্র দূরের বড়,
দূর থেকে সসম্ভ্রমে দেখা।
একটানা ঢেঊয়ের শব্দ
যেন কেউ একই সুর একই যন্ত্রে বাজিয়ে চলেছে।
এর চেয়ে নদী তো কাছের
তার সুরে তাল,ছন্দ,লয় মন টানে,
নদী যেন সেতুবন্ধ এপারে ওপারে
সমুদ্র তফাতে রাখে,
দু দেশের মাঝখানে যেন এক নিমানব ভূমি।

সূর্য ওঠার আগে পরে
ভোরের সমুদ্র দেখে ভালো লাগে_
নৌকো ভেড়ে তটে,
দশ বিশ জনে মিলে জাল তোলা,
ছোট বড় বিচিত্র মাছের বাটোয়ারা,
ঢেউ ভেঙে ছেলেদের চান,
এইসব যেন কোন নিষেধ ডিঙোনো
কার্ফুবন্দি শহরে যেমন দু হাত ঊর্ধ্বে তুলে রাস্তা পার হওয়া।

মানুষ কাছে না গেলে
প্রকৃতিও কানা হয়,
শক্ত তটের বুকে সমুদ্রের ঢেউ
যেন মানবীর বুকের গড়নে ধরা আছে।

**"পরিচিতি
জন্ম ১৯৫০। স্নাতক। কবিতা,ছড়া, ছোট গল্প, অণু গল্প, নিবন্ধ লিখে থাকি।, বড়দের জন্য, ছোটদের জন্যও। কিছু অনুবাদও করেছি কবিতা ও গল্পের, বাংলা থেকে ইংরেজিতে। প্রকাশিত বই_ আসলে আলোর জন্যে, এখানে তরঙ্গ এখানে জীবন,জলের উপমা, অপ্রিয় শব্দমালা আর যৌথভাবে যারা কবিতা পড়েন না,ছড়ার মজা খাস্তা গজা, চার মাথার মোড়।

রতন বসাকের তিনটি কবিতা

রতন বসাকের তিনটি কবিতা --

(১)
সহজ নয়


প্রেমে পড়া কঠিন নয় তো
জ্ঞানী মানুষ বলে,
তারই ছবি আঁকতে থেকে
ভালোবাসার পথটি দেখে
উদাস মনে চলে।

অনেক আশা অনেক স্বপ্ন
ভেবে জীবন গড়ে,
সুখের ছোঁয়া পাবে শেষে 
কল্পানার ঐ রাজ্যে ভেসে
প্রেম পাহাড়ে চড়ে।

সময়গুলো চলতে থাকে
ঘড়ি কাঁটার সাথে,
দূরেই থাকে ভালোবাসা 
দেয় না কিছু মনে আশা
ভাবনা বাড়ে মাথে।

ভালোবাসা যেমন সহজ
এক পলকে দেখে,
তেমন শক্ত পেতে গেলে
দেখা গেছে কষ্টই মেলে
তাতে আশা রেখে।

(২)
ভীষণ সমস্যা


বানের জলে ভেসে গেলো
চাষের বলদ দূরেতে,
তার কারণেই মনের বীণা
বাজে করুণ সুরেতে।

দৌড়ে এলাম মাঠের পরে
জল ঢুকেছে বাড়িতে,
প্রাণে বেঁচে থাকবো বলে
বাধ্য হলাম ছাড়িতে।

জমির ফসল ডুবে গেছে
পচন তাতে ধরেছে,
জলস্রোতে গ্রাম শহরের
মানুষ পশু মরেছে।

নেতারা সব ত্রাণটা দিতে
সেল্ফি আগে নিয়েছে,
সংবাদপত্রে নাম কামাতে 
তবেই হাতে দিয়েছে!

খাবার কিছু নেই তো ঘরে
কেমন করে খাবোরে,
খিদের জ্বালা মেটাতে ভাই
কোথা আমি যাবোরে?

(৩)
নিজেকে দিচ্ছি ফাঁকি

মানব দেহে জন্ম নিলাম
এই জগতের পরে,
ভোগবিলাসে সময় বয়ে
ঘড়ির কাঁটা সরে।

বিবেকের ঘর বন্ধ রেখে
স্বার্থ দেখেই চলি,
কাজে নহে মুখেই খালি 
ভালো কথা বলি!

পরের দেখে হিংসা করে
জ্বলে পুড়ে মরি,
সুযোগ বুঝে সবার আগে
নিজের ঘরে ভরি।

কারো ভালো চাই না কভু
মনের থেকে আমি,
গরিব দুখীর কষ্ট দেখেও
কোথায় বলো থামি?

আমি কেমন জানার জন্য
হেথা-হোথা ঘুরি,
মুখোশ পরে সাজছি সাধু 
করে যাচ্ছি চুরি!


***পরিচিতি : -
জন্ম :- ২৬ .০২.১৯৬৭
স্থান :- কলকাতা
শিক্ষা :- স্নাতক (B.A.)
প্রাক্তন সৈনিক, ভারতীয় বিমান বাহিনী। 
জুন, ২০১৮ থেকে আমি ছড়া, কবিতা ও প্রবন্ধ লেখা শুরু করি । ফেসবুকে বিভিন্ন সাহিত্য গ্রুপে নিয়মিত প্রতিদিন লেখালেখি করি । এ পর্যন্ত ৫০০০ টির বেশি বিভিন্ন সাহিত্য গ্রুপ থেকে সম্মাননা প্রাপ্ত কবিতা লিখেছি । ২৫ টির বেশি যৌথ কাব্য সংকলন, ৫০ টির বেশি ই - বুক ও ১ টি একক পরমাণু কবিতার বই আমার বের হয়েছে ।

দীপান্বিতার সলতে"--কার্ত্তিক মণ্ডল

দীপান্বিতার সলতে"
                      কার্ত্তিক মণ্ডল

তোর জন্য ভারি মন কাঁদে---!
ছোট্টবেলায় উঠোন জুড়ে তোর সেই খিলখিলানো হাসি আর হাত পা নেড়ে নেড়ে কত যে অঙ্গভঙ্গি করতিস
আজও তা ভুলতে পারি না,
পদ্মের পাপড়ির মত-----!
একটি একটি করে খুলত ।
শাখা পল্লবে যখন রূপ এলো
পায়ের নূপুরে নিক্কণের সুর,
সারা ঘর ভরা মেদুরতা
পলাশ কৃষ্ণচূড়ায় ভরা বসন্ত ,
হাঁসের পাখনায় সীমন্ত আঁকা রামধনু
গ্রীষ্ম বর্ষা বসন্তের কোলে
তুই নদী হয়ে গেলি,
কূল ভাঙা নদী
রেদ ঠেলে ঠেলে যেই সাগরে মিশে গেলি
অফুরন্ত জল
তৃষ্ণা মিটল কিনা জানি না !
অথচ----
আমাদের মাটির ঘরের আলো নিভে গেল,
আলো নিভে গেল তোর জন্ম শিশুর
সে বড়ো হবে মাতৃ হারার ব্যথা নিয়ে
সারা জীবন হাতড়াতে হাতড়াতে
এই বিশাল বুভুক্ষু পৃথিবীর বুকে
মাতৃ হারা অনাথ অবহেলিত
দীপান্বিতার সলতে হয়ে----------!


***কার্ত্তিক মণ্ডল
গ্রাম-পশ্চিমবাড়
পোস্ট-ধনেশ্বরপুর
থানা- পিংলা
জেলা-পশ্চিম মেদিনীপুর
পিন-721166
পিতা-বিজয় মণ্ডল
মাতা-মুক্তাবালা মণ্ডল
জন্ম-25/07/71
শিক্ষা-বি এস সি বি এড
পেশা-শিক্ষকতা
লেখালেখি-পঞ্চম শ্রেণী থেকে
দেশ বিদেশের বিভন্ন পত্রিকায়
প্রকাশিত বই-চাঁদের কণা
পুরস্কার- ই-সৃষ্টি সারথি ২২

ঘাসের দেশে --মাথুর দাস

ঘাসের দেশে

মাথুর দাস

ঘাসের দেশে বাস করে না সিংহ হাতি বাঘ,

একটিও নেই ছায়াতরু, তপোবনের আশ্রম ;

নেই জলা বা জঙ্গলও, মরুর মরীচিকা-ভ্রম,

শঙ্কাবিহীন  চরে  বেড়ায়  ভেড়া হরিণ ছাগ ।



ঘাসের দেশের শ্যামলিমা নয়ন-অভিরাম,

দু'চোখ জুড়ায় দৃশ্য দেখে হরিৎ ক্ষেত্রে ঢেউ ;

শষ্পরাজির বাহার বুঝি এড়াতে পারে কেউ !

লহর তুলে বয় যে বাতাস নিত্য অবিরাম ।



ঘাসের দেশে  বৃক্ষ নেই,  ঋক্ষকুলও উধাও,

অহিংসতায় বিরাজ করে  চির নিঃঝুম শান্তি ;

ঘাসের দেশ ঘাসেরই দেশ নধর শ্যামলকান্তি ।

এমনতর ঘাসের দেশ পাবেই না তো কোথাও ।



***পরিচিতি :--

-----------

মাথুর দাস । কবি ও ছড়াকার । বসবাস পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরে । কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা দুর্গাপুর স্টীল প্ল্যান্ট থেকে অবসরপ্রাপ্ত । মূলত কবিতা ও ছড়া লেখেন । নিয়মিত দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ছাড়াও বিদেশে অর্থাৎ বাংলাদেশ, আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডা, সৌদি আরব ইত্যাদি জায়গার জনপ্রিয় পত্র-পত্রিকাতেও তাঁর লেখা প্রকাশিত হয় ।

শংকর ব্রহ্মর কবিতা

কবিতাগুচ্ছ
শংকর ব্রহ্ম

-------------------------------------
শংকর ব্রহ্মর কবিতা      
-------------------------------------

১).

স্বপ্নরেণু
-----------------

মুঠো ভর্তি ফুলরেণু, 
      রংবেরংয়ের আশা একদিন ভাষা পাবে ভেবে,
তুলে রাখি গোপনে সিন্দুকে, পরম আদরে
                   নিন্দুকে বলবে কত কথা, তা ও জানি
তবু কাঁথা কানি জড়িয়ে,এসো বসি এখন,
      এইবার শীতে, আর কোথাও যাব না বেড়াতে।

অন্তরে তুমি গান ধরবে গুনগুন স্বরে,
          মৌমাছিরা ছুটে আসবে ঘরে আদর করবে,
সবরেণু ঝরে পড়বে তোমার উপরে এরপর ফিরে যাবে ওরা,
তারপর কি যে হবে,তা কি কোনদিনও ভেবেছো অন্তরে?

শোন তবে,মুঠো ভর্তি রংবেরয়ের স্বপ্ন আশা
            একদিন ভাষা পেয়ে, ফুলের মতো ফুটবে,
তারপর দ্রুত মৌমাছিরা ছুটবে আনন্দে দিশেহারা হয়ে,
            তাতে আবার তুমি কুঁকড়ে যেয়ো না ভয়ে। 
সে কথা কি তুমি, জানতে চাও তবে?
                         কোথায়, কি ঘটবে জীবনে কবে?

---------------------------------------------------------------
২).

আপেক্ষিক
------------------------------

                                       জয় পরাজয় সব কিছুই আসলে ছিল আপেক্ষিক
এমন কি আমার ব্যক্তিগত প্রণয়ও।

                                           কে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী? 
এই ভেবে প্রতিনিয়ত দুঃখ পেয়েছি,
                  গাছের ছায়া এড়িয়ে গেছি অবহেলায়
প্রখর রৌদ্রে পুড়ে
                   খাঁটি সোনা করতে চেয়েছি নিজেকে।

অযথা ভালবাসার টানে 
                                 শিরা-উপশিরা ছিঁড়ে গেলেও
তার জন্য কষ্ট পাইনি ,
                             ভেবেছি এটাই ভালবাসার জয়
অথচ ভালবাসতে চেয়ে
                                    পরাজিত হয়েছি বারবার।

আসলে সব কিছুই ছিল আপেক্ষিক
                      এমন কি আমার ব্যক্তিগত প্রণয়ও।

---------------------------------------------------------------
৩).

অপেক্ষায়
---------------------

পোষ মানাতে না পারলেই
বুকের আগল ভেঙে ভালবাসা ছুটে যায় দিক বিদিকে
আপোষহীন দুঃখের কাছে 
কবিরাই সর্বদা ছুটে আসে সন্ধ্যায় আপোষ করতে।

আর খরস্রোতা নদীর বুকে অন্ধকার ঝুঁকে পড়ে
ঠোঁট রাখে নির্দিধায়,
অহংকারে বুকে তার ঢেউ ওঠে।

মনে পড়ে যৌবনের সন্ধিক্ষণে কাউকে বলেছিলাম ভালবাসি
অথচ হৃদয় খুলে তাকে দেখাতে পারিনি ভালবাসা
তৎক্ষণাৎ লোডশেডিংয়ে সারা পাড়া জুড়ে
নেমে এসেছিল অন্ধকার।
সে রমণী অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিল,
ফিরে আসেনি আর 
আমি অপেক্ষায় ছিলাম,আজও অপেক্ষায় আছি তার।

---------------------------------------------------------------
৪)

কবির_কাজ
---------------------

সুজন ছাড়া টেকে না সংসার
                      কারও জন্য ভাবে না কেউ আর,
অন্ধকারে বন্ধ থাকে দ্বার
                     বিপদকালীন কে আর বল কার?

সবাই বাঁচে স্বার্থ নিয়ে তার 
                         এটাই এখন সংকট সভ্যতার
কেউ যে নেই পাশে দাঁড়াবার
                         তাই বিপদ বড় মানবিকতার।

দুর্জনের হাতে যে সমাজ
                       সেই সমাজে কবির বড় কাজ
ছিঁড়ে ফেলে মুখোশপরা সাজ
                       তুলে ধরা মানবিক আওয়াজ।

---------------------------------------------------------------
৫).

প্রলাপ                     
--------------

আমরা বসতাম যে বাগানে, সেখানে উঠেছে কত বাড়ি ,
তবু আমি এমন আনাড়ি
                আতি-পাতি সেখানে তোমাকে খুঁজে ফিরি।
মাঝে মাঝে যাই,দেখে আসি,
তোমাকে যে ভালবাসি বলিনি কখনও
           তবু দিন দিন আরও মায়াটান বেড়ে যায় যেন।

অনাদর ও উপেক্ষার ভাষা আছে
                                আমি তা শিখতে পারিনি বলে 
আজও পথে হঠাৎ দেখা হলে পরে
                          একগাল হাসি নিয়ে সামনে দাঁড়াই।
অনায়াসে উপেক্ষার ভান করে তুমি যাও চলে
        আমি যে কেন তা পারি না,তুমি দুঃখ পাবে বলে?

---------------------------------------------------------------
৬).

খোঁজা
----------------------------
                     
                         বাহিরে আর রেখো না আমায়
অন্তরে লুকিয়ে রাখো শুধু,
                              যেন কেউ দেখতে না পায়।
ওই দেখ খাঁচা ছেড়ে পাখি উড়ে যায়
         আমিও তো উড়ে যাব হায় দূরে কোথায়,
খুঁজে আর পাবে না তো তুমি।
                        বাইরে আর ডেকো না আমায়
রাখ তব জুড়ে মনোভূমি,
                             জানি না যে হারাব কোথায়
খুঁজে আর পাবে না যে তুমি।

---------------------------------------------------------------
৭).

তোমাকে খোঁজা
-------------------------

তোমাকে পাইনি আগে
                             তাই রাগে ভেঙেছি হৃদয় ,
সে ভাঙা হৃদয় তুমি জুড়ে দিতে এসে
                           কেন বল ফেলে ভালবেসে
ছড়ালে ফুলের বীজ কিছু  
                              হয় তো তা নয় শুধু মিছু।

                সে বাগান আজ ভরে গেছে ফুলে
আজ তুমি কাছে নেই ,
                            আমি তাই হারিয়েছি খেই
বাগানে খুঁজছি ভুলে, 
                           ফুল ছিঁড়ে শুধু তোমাকেই।

---------------------------------------------------------------
৮).
                                 
ধাক্কা মারুন
-------------------

এই যে হৃদয় 
এইখানে আজ বাস করে এক দুঃখি মানুষ ,
নেই তার মান নেই তার হুশ
আছে কেবল থাকার মধ্যে নিঃস্ব হৃদয় ,
সেখানে রাখছে লিখে মনের সকল গোপন ভয়।

অন্য সবার দুঃখ ব্যথায় হৃদয় যে তার জর্জরিত 
তবু সে নয় তো ভীত
এই সমাজের নিঃস্ব যারা তাদের মতো  
ভবিষ্যতে কি হবে তার কিংবা তাদের ,
এসব কথা ভাবতে বসে হৃদয় কাঁদে।

তবু চোখে আসে না জল জ্বলে মনে তীব্র আগুন
সবাইকে সে ডেকে বলে এবার সবাই একটু জাগুন ,
একটু  না হয় রেগে আগুন হয়ে
এই সমাজের অবিচার আর 
অত্যাচারের বন্ধ দ্বারে সজোরে এক ধাক্কা মারুন।


---------------------------------------------------------------
৯).

ভোটতন্ত্র
-------------------

                       জনগণতন্ত্র মূল তার মন্ত্র 
নেই আর দরকার
তোমাদের প্রয়োজন নিজেদের ভাববার 
        তোমাদের দরকার আমরাই ভাবব
তোমাদের দাবী নিয়ে প্রয়োজনে
                       আমরাই রাজপথে নাবব 

এ ছাড়া আমাদের 
                           নেই কোন কাজ আর
তোমাদের নেই আর দরকার
              নিজেদের প্রয়োজন ভাববার 
যা ভাবার আমরাই ভাবব 
প্রয়োজনে দাবী নিয়ে রাজপথে নাবব 

         সোজা কথা সোজা ভাবে বুঝে নাও
আর কিছু না ভেবেই আমাদের ভোট দাও 

---------------------------------------------------------------
১০).

ভাবনা
-------------

ভাবি মনে মনে
       কবিতা লিখব না আর কখনও জীবনে।

কবিতার ভাবগুলি আজকাল 
           আমাকেই দেখে যেন অসহায় চোখে,
হাই ভোল্ট বিদ্যুতের মত আতঙ্ক ছড়ায় মনে,
আর শব্দগুলি হায় নির্মম ভাবে 
                          হাড়-মাস ছিঁড়ে খেতে চায়।

আমাদের এইসব ছদ্মবেশী জীবন যাপনে, 
                              আজ এই অন্ধকার দিনে
কবিতার বল আর বাঁচবার জায়গা কোথায়?

---------------------------------------------------------------
১১).

একাকীত্ব
--------------------------

এ'ভাবেই ফিরে যেতে হয়,
                        কত ইচ্ছে ধরে রেখে মনে
এ'ভাবেই ফিরে যেতে হয়
                         কত স্বপ্ন বুকে পুষে রেখে
এ’ভাবেই ফিরে যায় 
                                        গন্ধ রেখে ফুল
এ'ভাবেই ফিরে যায় 
                                 জ্যোৎস্না রেখে চাঁদ
এ'ভাবেই ফিরে যায় প্রেম 
                                        ছড়িয়ে বিষাদ
সকলেই আসে ফিরে যায়
                    শুধু পড়ে রয় একাকী হৃদয়
এভাবে অতৃপ্তি নিয়ে বুঝি 
                     সকলকেই ফিরে যেতে হয়?


---------------------------------------------------------------
১২).

ক্ষীণ প্রতিচ্ছবি
------------------------

সারাদিন বৃষ্টি পাত
              সারা রাত
তোমার মুখের রেখা ভিজে যায় জলে
তবুও অস্পষ্ট কিছু জেগে থাকে 
                                     উদাসীন হলে। 

ডালিম দানার মতো দাঁতের গোপন ধার
                   কামড়ে ধরে বুকের গভীরে। 

সারা রাত বৃষ্টিপাত
                সারা দিন
তোমার মুখের ক্ষীণ প্রতিচ্ছবি
                জেগে থাকে আমার ভিতরে। 

---------------------------------------------------------------

সুদীপ্ত বিশ্বাসের গুচ্ছ কবিতা

সুদীপ্ত বিশ্বাসের গুচ্ছ কবিতা --

বাউল 

একলা বেশ তো আছি,একলা থাকাই ভালো
দুপুরে ডিস্কো নাচি, রাতে পাই চাঁদের আলো।
কোনো এক নিঝুম দুপুর, কিংবা গভীর রাতে
মনে আর পড়েই না তো,টান দিই গঞ্জিকাতে।
পরোয়া করব কেন? সমাজটা দিচ্ছে বা কী?
ছোট্ট জীবন আমার, তাইতো নাচতে থাকি।
পলকা এই জীবনে, কী হবে দুঃখ এনে?
চল্ না উড়াই ঘুড়ি, সুতোতে মাঞ্জা টেনে।
লাফিয়ে পাহাড় চড়ে, সাঁতরে নদীর বুকে
কবিতা দু'এক কলি আসলে রাখছি টুকে।
এভাবে কাটছে তো দিন,তোমাকে আর কী খুঁজি?
জানিনা কোথায় তুমি, আমাকে ভাবছো বুঝি?
ভাবলে কী হবে আর, নদীতে জল গড়ালে
চাঁদটা বন্ধু আমার, গভীর এই রাত্রিকালে 
গাছেরা আগলে রাখে, পাখিরা গাইতে থাকে
ঘরে আর যায় কী ফেরা? ওই যে বাউল ডাকে !

রাত

জেগে বসে আছি রাতের গভীরে একা।গোটা পৃথিবীটা ঘুমে
আকাশের বুকে অনেক তারার মেলা,কিছু লোক চ্যাটরুমে
সম্পর্ক তৈরিতে এখনও ভীষণ ব্যস্ত।ওড়ে রাতচরা পাখি
শাল-পিয়ালের আধো ঘুমে ভেজা ডালে।কবিতায় লিখে রাখি
ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে নদীটা এগোয়, সাগরের অভিসারে
পাহাড় চূড়াটা একাএকা জেগে থাকে এ রাতের অন্ধকারে
লাজুক চাঁদটা গাঁয়ের বধূর মতো ঘোমটায় মুখ ঢাকে
দু'একটা পাতা খসে যায় চুপিসারে, কেই বা হিসেব রাখে?
বনের গভীরে নিশাচর ছুটে যায়, রাতের শিশির ঝরে
খুব মমতায় পৃথিবীর সারা গায়ে। মনে পড়ে মনে পড়ে
হারানো সেসব বাঁধাবাঁধি করে বাঁচা, সুরেসুরে বাঁধা তার
গভীর গভীর অজানা অলীক দেশে প্রেম ভরা অভিসার...

কাঁটাতার

আমরা পাখিরা উড়ে যাই কতদূরে
কত দেশ-গ্রাম ইয়ত্তা নেই তার
মানুষেরা শুধু ঝগড়া-বিবাদ করে
মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।

আমরা নদীরা বয়ে যাই কত দূরে
পাহাড়ের থেকে দূর সাগরের পার
মানুষেরা শুধু দ্বন্দ্ব-বিবাদ করে
মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।

আমরা আলোরা সূর্যের থেকে এসে
ভেদাভেদ ভুলে ঘোচাই অন্ধকার
মানুষেরা শুধু দ্বন্দ্ব-বিবাদ করে
মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।

আমরা মেঘেরা হাওয়ার ডানায় ভেসে
কত পথ চলি হিসেব থাকে না তার
মানুষেরা শুধু দ্বন্দ্ব-বিবাদ করে
মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।

মানুষেরা কেন কাঁটাতার ভালোবাসে?
হিংসা বা দ্বেষে কেন যে বিবাদমান!
কেন যে শেখেনি ভালোবেসে বেঁচে থাকা,
নদী বা বাতাস,মেঘ-পাখিদের গান।

বিপ্রলব্ধ
- সুদীপ্ত বিশ্বাস
ত্রহ্যস্পর্শে তিথিক্ষয়ে চাঁদের দেখা নেই
মঞ্জুষাতে লক্ষ্মীকে নয়, চাইছি তোমাকেই।
তামরসের মতোই তুমি, মুগ্ধ হয়ে থাকি
ধৈবতহীন আরোহণে তিলক কামোদ রাখি।
অনিকেত শব্দচাষী বন-পাহাড়ে ঘুরি
স্মিত হাসির ময়ূখছটায় মন করেছ চুরি।
ভৈরবের ওই বিরহী সুর পাখির ডাকে ঝরে
বিপ্রলব্ধ, বিহানবেলায় বড্ড মনে পড়ে।


শব্দার্থ ঃ-
তিথিক্ষয় ~ একদিনে দুই তিথির ক্ষয় হয়ে তৃতীয় তিথির সংযোগ; ত্রাহ্যস্পর্শ; অমাবস্যা।
মঞ্জুষা ~ লক্ষ্ণীর ঝাঁপি।
তামরস ~ পদ্ম।
তিলক কামোদ হল একটা রাগ।এই রাগে অবরোহণে সাতটি সুর থাকলেও আরোহণে ধা বা ধৈবত সুরটি থাকে না।
অনিকেত ~ গৃহহীন পথিক।
শব্দচাষী ~ কবি।
ময়ূখ ~ রশ্মি।
ভৈরব হল প্রভাতকালীন একটা রাগ।ভোর বেলা গাওয়া হয় এই রাগ।
বিপ্রলব্ধ অর্থ বঞ্চিত বা প্রতারিত।
বিহানবেলা মানে সকালবেলা।



Sudipta Biswas,Deputy Magistrate,(WBCS Exe.),
Nokari Uttar Para, PS-Ranaghat,Dist- Nadia,Pin- 741202
Mob-9836020902

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা --

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা -- চেনা চেনা চেনা মুখ আসে কালো মেঘের গায় অচেনা মানুষের ভিড়ে হারিয়ে খুঁজি তায় স্বার্থপরতা ব...