শংকর ব্রহ্ম
-------------------------------------
শংকর ব্রহ্মর কবিতা
-------------------------------------
১).
স্বপ্নরেণু
-----------------
মুঠো ভর্তি ফুলরেণু,
রংবেরংয়ের আশা একদিন ভাষা পাবে ভেবে,
তুলে রাখি গোপনে সিন্দুকে, পরম আদরে
নিন্দুকে বলবে কত কথা, তা ও জানি
তবু কাঁথা কানি জড়িয়ে,এসো বসি এখন,
এইবার শীতে, আর কোথাও যাব না বেড়াতে।
অন্তরে তুমি গান ধরবে গুনগুন স্বরে,
মৌমাছিরা ছুটে আসবে ঘরে আদর করবে,
সবরেণু ঝরে পড়বে তোমার উপরে এরপর ফিরে যাবে ওরা,
তারপর কি যে হবে,তা কি কোনদিনও ভেবেছো অন্তরে?
শোন তবে,মুঠো ভর্তি রংবেরয়ের স্বপ্ন আশা
একদিন ভাষা পেয়ে, ফুলের মতো ফুটবে,
তারপর দ্রুত মৌমাছিরা ছুটবে আনন্দে দিশেহারা হয়ে,
তাতে আবার তুমি কুঁকড়ে যেয়ো না ভয়ে।
সে কথা কি তুমি, জানতে চাও তবে?
কোথায়, কি ঘটবে জীবনে কবে?
---------------------------------------------------------------
২).
আপেক্ষিক
------------------------------
জয় পরাজয় সব কিছুই আসলে ছিল আপেক্ষিক
এমন কি আমার ব্যক্তিগত প্রণয়ও।
কে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী?
এই ভেবে প্রতিনিয়ত দুঃখ পেয়েছি,
গাছের ছায়া এড়িয়ে গেছি অবহেলায়
প্রখর রৌদ্রে পুড়ে
খাঁটি সোনা করতে চেয়েছি নিজেকে।
অযথা ভালবাসার টানে
শিরা-উপশিরা ছিঁড়ে গেলেও
তার জন্য কষ্ট পাইনি ,
ভেবেছি এটাই ভালবাসার জয়
অথচ ভালবাসতে চেয়ে
পরাজিত হয়েছি বারবার।
আসলে সব কিছুই ছিল আপেক্ষিক
এমন কি আমার ব্যক্তিগত প্রণয়ও।
---------------------------------------------------------------
৩).
অপেক্ষায়
---------------------
পোষ মানাতে না পারলেই
বুকের আগল ভেঙে ভালবাসা ছুটে যায় দিক বিদিকে
আপোষহীন দুঃখের কাছে
কবিরাই সর্বদা ছুটে আসে সন্ধ্যায় আপোষ করতে।
আর খরস্রোতা নদীর বুকে অন্ধকার ঝুঁকে পড়ে
ঠোঁট রাখে নির্দিধায়,
অহংকারে বুকে তার ঢেউ ওঠে।
মনে পড়ে যৌবনের সন্ধিক্ষণে কাউকে বলেছিলাম ভালবাসি
অথচ হৃদয় খুলে তাকে দেখাতে পারিনি ভালবাসা
তৎক্ষণাৎ লোডশেডিংয়ে সারা পাড়া জুড়ে
নেমে এসেছিল অন্ধকার।
সে রমণী অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিল,
ফিরে আসেনি আর
আমি অপেক্ষায় ছিলাম,আজও অপেক্ষায় আছি তার।
---------------------------------------------------------------
৪)
কবির_কাজ
---------------------
সুজন ছাড়া টেকে না সংসার
কারও জন্য ভাবে না কেউ আর,
অন্ধকারে বন্ধ থাকে দ্বার
বিপদকালীন কে আর বল কার?
সবাই বাঁচে স্বার্থ নিয়ে তার
এটাই এখন সংকট সভ্যতার
কেউ যে নেই পাশে দাঁড়াবার
তাই বিপদ বড় মানবিকতার।
দুর্জনের হাতে যে সমাজ
সেই সমাজে কবির বড় কাজ
ছিঁড়ে ফেলে মুখোশপরা সাজ
তুলে ধরা মানবিক আওয়াজ।
---------------------------------------------------------------
৫).
প্রলাপ
--------------
আমরা বসতাম যে বাগানে, সেখানে উঠেছে কত বাড়ি ,
তবু আমি এমন আনাড়ি
আতি-পাতি সেখানে তোমাকে খুঁজে ফিরি।
মাঝে মাঝে যাই,দেখে আসি,
তোমাকে যে ভালবাসি বলিনি কখনও
তবু দিন দিন আরও মায়াটান বেড়ে যায় যেন।
অনাদর ও উপেক্ষার ভাষা আছে
আমি তা শিখতে পারিনি বলে
আজও পথে হঠাৎ দেখা হলে পরে
একগাল হাসি নিয়ে সামনে দাঁড়াই।
অনায়াসে উপেক্ষার ভান করে তুমি যাও চলে
আমি যে কেন তা পারি না,তুমি দুঃখ পাবে বলে?
---------------------------------------------------------------
৬).
খোঁজা
----------------------------
বাহিরে আর রেখো না আমায়
অন্তরে লুকিয়ে রাখো শুধু,
যেন কেউ দেখতে না পায়।
ওই দেখ খাঁচা ছেড়ে পাখি উড়ে যায়
আমিও তো উড়ে যাব হায় দূরে কোথায়,
খুঁজে আর পাবে না তো তুমি।
বাইরে আর ডেকো না আমায়
রাখ তব জুড়ে মনোভূমি,
জানি না যে হারাব কোথায়
খুঁজে আর পাবে না যে তুমি।
---------------------------------------------------------------
৭).
তোমাকে খোঁজা
-------------------------
তোমাকে পাইনি আগে
তাই রাগে ভেঙেছি হৃদয় ,
সে ভাঙা হৃদয় তুমি জুড়ে দিতে এসে
কেন বল ফেলে ভালবেসে
ছড়ালে ফুলের বীজ কিছু
হয় তো তা নয় শুধু মিছু।
সে বাগান আজ ভরে গেছে ফুলে
আজ তুমি কাছে নেই ,
আমি তাই হারিয়েছি খেই
বাগানে খুঁজছি ভুলে,
ফুল ছিঁড়ে শুধু তোমাকেই।
---------------------------------------------------------------
৮).
ধাক্কা মারুন
-------------------
এই যে হৃদয়
এইখানে আজ বাস করে এক দুঃখি মানুষ ,
নেই তার মান নেই তার হুশ
আছে কেবল থাকার মধ্যে নিঃস্ব হৃদয় ,
সেখানে রাখছে লিখে মনের সকল গোপন ভয়।
অন্য সবার দুঃখ ব্যথায় হৃদয় যে তার জর্জরিত
তবু সে নয় তো ভীত
এই সমাজের নিঃস্ব যারা তাদের মতো
ভবিষ্যতে কি হবে তার কিংবা তাদের ,
এসব কথা ভাবতে বসে হৃদয় কাঁদে।
তবু চোখে আসে না জল জ্বলে মনে তীব্র আগুন
সবাইকে সে ডেকে বলে এবার সবাই একটু জাগুন ,
একটু না হয় রেগে আগুন হয়ে
এই সমাজের অবিচার আর
অত্যাচারের বন্ধ দ্বারে সজোরে এক ধাক্কা মারুন।
---------------------------------------------------------------
৯).
ভোটতন্ত্র
-------------------
জনগণতন্ত্র মূল তার মন্ত্র
নেই আর দরকার
তোমাদের প্রয়োজন নিজেদের ভাববার
তোমাদের দরকার আমরাই ভাবব
তোমাদের দাবী নিয়ে প্রয়োজনে
আমরাই রাজপথে নাবব
এ ছাড়া আমাদের
নেই কোন কাজ আর
তোমাদের নেই আর দরকার
নিজেদের প্রয়োজন ভাববার
যা ভাবার আমরাই ভাবব
প্রয়োজনে দাবী নিয়ে রাজপথে নাবব
সোজা কথা সোজা ভাবে বুঝে নাও
আর কিছু না ভেবেই আমাদের ভোট দাও
---------------------------------------------------------------
১০).
ভাবনা
-------------
ভাবি মনে মনে
কবিতা লিখব না আর কখনও জীবনে।
কবিতার ভাবগুলি আজকাল
আমাকেই দেখে যেন অসহায় চোখে,
হাই ভোল্ট বিদ্যুতের মত আতঙ্ক ছড়ায় মনে,
আর শব্দগুলি হায় নির্মম ভাবে
হাড়-মাস ছিঁড়ে খেতে চায়।
আমাদের এইসব ছদ্মবেশী জীবন যাপনে,
আজ এই অন্ধকার দিনে
কবিতার বল আর বাঁচবার জায়গা কোথায়?
---------------------------------------------------------------
১১).
একাকীত্ব
--------------------------
এ'ভাবেই ফিরে যেতে হয়,
কত ইচ্ছে ধরে রেখে মনে
এ'ভাবেই ফিরে যেতে হয়
কত স্বপ্ন বুকে পুষে রেখে
এ’ভাবেই ফিরে যায়
গন্ধ রেখে ফুল
এ'ভাবেই ফিরে যায়
জ্যোৎস্না রেখে চাঁদ
এ'ভাবেই ফিরে যায় প্রেম
ছড়িয়ে বিষাদ
সকলেই আসে ফিরে যায়
শুধু পড়ে রয় একাকী হৃদয়
এভাবে অতৃপ্তি নিয়ে বুঝি
সকলকেই ফিরে যেতে হয়?
---------------------------------------------------------------
১২).
ক্ষীণ প্রতিচ্ছবি
------------------------
সারাদিন বৃষ্টি পাত
সারা রাত
তোমার মুখের রেখা ভিজে যায় জলে
তবুও অস্পষ্ট কিছু জেগে থাকে
উদাসীন হলে।
ডালিম দানার মতো দাঁতের গোপন ধার
কামড়ে ধরে বুকের গভীরে।
সারা রাত বৃষ্টিপাত
সারা দিন
তোমার মুখের ক্ষীণ প্রতিচ্ছবি
জেগে থাকে আমার ভিতরে।
---------------------------------------------------------------
No comments:
Post a Comment