Thursday, 7 July 2022

অসিত কুমার পালের তিনটি কবিতা

অসিত কুমার পালের তিনটি কবিতা --

(১) জীবনের সাথে সমঝোতা করে নিন

আপনি যদি ষাটটি বসন্ত পার করে থাকেন
তবে আপনাকে অভিনন্দন জানাই ।
আপনার পরবর্তী জীবন আনন্দেই কাটবে
বলে আমার বিশ্বাস ।

আপনার সন্তান সন্ততিদের সাথে
সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলুন  ,
বিনিময়ে তাদের থেকে কিছু পাওয়ার
আশা কখনোই রাখবেন না ।

ছোটরা আগ্রহী থাকলে তবেই কোন বিষয়ে
তাদের সুপরামর্শ দিন ,
আপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান অযথা
বিতরণ করে তাদের বিরক্ত করবেন না ।

নিজের কাজ যথাসম্ভব নিজে করে নেওয়ার
অভ্যাস তৈরি করুন ,
কখনোই অন্যদের কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না
 বা কোন বিষয়ে নাক গলাবেন না ।

যথাসম্ভব কম কথা বলার অভ্যাস তৈরি করুন,
অন্যদের কথা বোঝার চেষ্টা করুন । 
নিজের অবস্থায় খুশি থাকায় চেষ্টা করুন, 
বন্ধুদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন ।

 ছোটখাট  বিষয়ে অভিযোগ করবেন না
 যা পাচ্ছেন তাই নিয়ে খুশি থাকুন ,
 কে আগে  কে পরে যাবে সেটা ভুলে
একা জীবন কাটানোর অভ্যাস করুন ।

খালি হাতেই চলে যেতে হবে ,তাই
অধিকার  বজায় রাখার চেষ্টা করবেন না ।
 মনের দুঃখ বেদনা লুকিয়ে রেখে
 জীবনের সাথে সমঝোতা করে নিন ।


(২) জীবনের সত্য


সময় এগিয়ে চলেছে, কিন্তু কেমন ভাবে ?
বোঝাই গেল না অস্থির জীবন্যাত্রায়
কখন আমাদের বয়স টা বেড়ে গেল ।

কোলে পিঠে চড়া বাচ্চাগুলো কখন 
যে আমাদের কাঁধ বরাবর পৌচেছে ;
তার হিসাবই রাখা গেল না ।

ভাড়া ঘরে জীবন শুরু করে কখন 
যে নিজেদের বাড়িতে পৌঁছে গেছি  ;
সেটা বুঝতেই পারলাম না ।

সাইকেলে হাফ প্যাডেল করতে করতে 
কখন যে বাইকে সওয়ার হয়ে গেছি ;
কেই বা তার হিসাব রেখেছে ।

মা বাবার উপর নির্ভরশীল থাকতে থাকতে
কখন যে স্ত্রী সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছি ;
তার হিসাব রাখা বেশ কঠিন ।

সুন্দর কালো চুলে চিরুনি চালাতে চালাতে
কখন যে মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে ;
নিজেও তার খবর রাখি নি ।

হন্যে হয়ে চাকরী খুঁজতে খুঁজতে কখন
যে অবসরের  বয়স এসে গেছে ;
তার খেয়াল রাখা হয়নি ।

বাচ্চাদের জন্য পয়সা কামাতে কামাতে
কখন সে বাচ্চারাই কামাতে শুরু করেছে ;
আজ আর তা মনে পড়ে না ।
 
বিশাল পরিবারে দাদু দিদা, কাকা পিসির
ভাই বোনের সাথে হেসে খেলে বড় হয়েছি ;
আজ  কে কোথায় , কে তার খবর রাখে ?

নিজের লোকেদের জন্য কিছু করার কথা
ভাবতে শুরু করলে শরীর সাথ দেবেনা ;
জীবনের এই সত্যটাকে ভাবতেও পারি নি ।


( ৩ ) মাদকতা


পান করার পরে পাটা টলে যায়
কিছুটা  মাতলামিও দেখা যায় ;
পানশালাতে যারা সময় কাটায়
তাদেরকেই  মদ্যপায়ী বলা যায় ।

তাদের কি এমন দুঃখকষ্ট থাকে
 কেন তারা সহজ পথে চলে না ?
 একটু মনখারাপ হলেই মদ্যপান
কেনই বা এমন মতি হয় জানিনা ।

অভ্যাসের বসেই মদ্য পান করে
বরবাদ হওয়ার পথে পা বাড়ায়;
মদ্যপান করার জন্যই যে তারা
রোজই নতুন বাহানা খুঁজে পায়  ।

দিনের বেলা হোক কিংবা রজনী
মদ্যপানের জন্য সর্বদাই তৈয়ার ;
বিয়ে হোক বা  অন্য কোন উৎসব
মদ্যপানের উপলক্ষ্য চাই কি আর ।

পানশালা হল এমন এক জায়গা
যেখানে রামও যায় রহিমও যায় ;
সেখানে জাতি ধর্ম সব একাকার
মদিরাতে সবাই তো আনন্দ পায় ।

 এক পাত্র মদিরা অমৃতের সমান
সকলেই যে মদিরা মন্ত্র জপ করে
নিজের করুন অবস্থাটা তুলে ধরে
মদ্যপানের অজুহাতটা খুঁজে মরে।

এমন মাদকাসক্ত অবস্থার মধ্যেও
মাতালরা দরকারী কাজ চালায় ;
মদিরা পান করতে করতেই তারা
জীবনের তরী ভাসিয়ে নিয়ে যায় ।

সব জ্ঞানীগুনিরা সঠিক বার্তা দেয়
জ্ঞানগর্ভ কথাও বলে থাকে সবে;
- মদিরা পান করা থেকে দূরে থাক
 পানশালার কাছ সর্বদাই দূরে রবে ।

-----------------------------------------

রচনা - অসিত কুমার পাল

No comments:

Post a Comment

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা --

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা -- চেনা চেনা চেনা মুখ আসে কালো মেঘের গায় অচেনা মানুষের ভিড়ে হারিয়ে খুঁজি তায় স্বার্থপরতা ব...