Thursday, 7 July 2022

কুটিল, কুপথ--স্নেহাশীষ মুখোপাধ্যায়

কুটিল, কুপথ--
স্নেহাশীষ মুখোপাধ্যায়


পণ্ডিতের গ্রহ থেকে আবার কান্না শুনতে পেলাম।
সর সর যারা বলছে, তারা কেউ কাঁদছে না - 
কিন্নর থেকে ভাল্লুকের মতো নামছে।
বন্ধ জানলাটা কতোক্ষণ থাকবে,
ভাবতে গিয়ে দেখি, 
বাড়ির নিচে, পাহাড়ের গায়ে
গাড়িগুলো কিভাবে যেন দাঁড়িয়ে আছে। 
সর সর করে পাথুরে ভাল্লুকগুলো, যোদ্ধা  
কিম্বা আততায়ীর মতো নামছে। 
গায়ে গায়ে ধোঁওয়া উঠছে।
সাদা ধোঁওয়ায় তাদের, রাতের রঙের মতো
কালো মনে হচ্ছে না!  

তারপর লাফ দিতে দিতে
বাসতেরি সেতুর গায়ে
একটা ভাল্লুক আছড়ে পড়লো।
তার আগে শিস উঠছিলো। 
ব্যস! সেতু শেষ। সেতু উলুঝলু হয়ে গেছে।
নিচের খাদের জলে সেতুর পাষাণ-পায়রার ডানা 
চিৎ হয়ে পড়লো। বন্ধ জানলা খুলেছো,
খুলে খুলে দেখছো, কে তুমি! 
লোভ, না কর্তব্য, নাকি কিছু করার নেই?
শিস উঠছিলো। একটা প্রাণভোমরা মুখ থেকে
যেন বের হয়ে আসছিলো। অন্য একটা ফুটেজ আরো
এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চলন্ত গাড়ি, সালতুজ নদীর ওপর দিয়ে
মৃত্যুর নক্সী কাঁথার বিছানো ছবি দেখছি ইউটিউবে।
তখনো...সবুজ শ্যাওলার মতো...

নক্সী কাঁথার রঙ এমন না!  

দেখতে দেখতে আমার প্রাণভোমরাও বেরিয়ে আসছে।
বলছে, দ্যাখাও, কিছু দ্যাখাও! 

দেখলাম, একটা সেতু প্রায় চিৎ হয়ে পড়ে গেলো।
বাড়িতে বসে দেখলাম। 
হিমাচল থেকে প্রায় দু-হাজার কিমি
গাড়ির রাস্তায় আমি নেই, তুমি নেই, থাকতেও পারবো না।
শীত, বসন্তে এখানে এসে কেউ মৃতের শ্বাস গুণবে না!  
তোমাকে বলছি, প্রিয়তমা, এবার চুমুর খেলা দ্যাখাও!
একটানে যেন প্যারাশুটের মতো ভাসতে ভাসতে
তোমার কাছে ফিরে আসি। 

এসব কথা কে বলেছে? 
কেউ তো বলেনি! 

গাড়ির চালক বঙ্গবাসী। বয়স বিয়াল্লিশ।
রাজস্থান, নাগপুর আরো কতো কি!
কি? কি মানে কি? 
না, ভুল বলেছি। রাজ্য, কি হয় নাকি?
যাই হোক, সেখানকার লোকজনও মারা গেছে।
সরকার ক্ষতিপূরণ দেবেন।
এছাড়া, কি করবেন? ধস নামা তো আটকানো যায় না! 

তার কি প্রেমিকা থাকতে নেই? গাড়ির চালকের...  
বউ, প্রেম...! 
সাংলা-কিন্নর- রবিবার এক মহাযাত্রা। 
 
সাদা ভাল্লুক, তোমরা আর কি করে পাথর হয়ে থাকবে?
অভিশাপ হাওয়াতে মরে গেছে। এখন দিন অভিশপ্ত হয়ে উঠছে। 
পাথরে খুব ধূম লেগেছে।
পাথর মানুষের মাথা থেঁতলে দিতে দিতে এগোচ্ছে।
সেতুর মাথা, পেট, হাত, সব থেঁতলে দিয়েছে সাদা ভাল্লুকরা।
ভাল্লুকরা কাঠ খেয়ে অঙ্গারের মতো দিন উগড়ে দিলো। 
পাথর থেকে আলো বিতরণ করার কথা দেওয়া আছে না! 

তুমি এখন আমার কাঁধে একটা চুমুর ঢিবি বসিয়ে দিয়েছো সালতুজ! 
আর বলছো, কি সরাতে চায় ভাল্লুকরা?
ভাল্লুকরা কি সরাতে চাইছিলো?
এখন ইচ্ছে করছে, পাল্টা একটা চুমু খেয়ে বলি,
'বাধা'!

ঢিবিটা অনেক দূরে কারো কাঁধের ওপরে ঝুলছে। 
কাঁধ থেকে ভার নেমে গেলে,
ঢিবিটাকে মনে হবে রাধা! 
কি নিষ্ঠুর তুমি ধস, কল্পকৈলাশ, আর  
ঠাণ্ডার ভেতরে জমে থাকা
তরুণীর বেদানা-ঠোঁটের রস... 
ঠিক তোমার মতো উন্মুখ,  তিস্তা! 


No comments:

Post a Comment

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা --

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা -- চেনা চেনা চেনা মুখ আসে কালো মেঘের গায় অচেনা মানুষের ভিড়ে হারিয়ে খুঁজি তায় স্বার্থপরতা ব...