গোবিন্দ মোদকের দুটি কবিতা --
১. এভাবেও মুছে যাওয়া যায়
এভাবেও মুছে যাওয়া যায় -
হঠাৎ বৃষ্টি এলে শ্লেটের লেখার মতো,
যাপিত জীবন জুড়ে থেকে যায় জলদাগ,
আঁকিবুকি, এলোমেলো ঢেউয়ের সাতকাহন,
বিষাদের বনমালী আর দীর্ঘনিঃশ্বাস ....
তবু ঘুঁচে যায় নিদাঘের মাখামাখি,
বহু ব্যবহৃত পোশাক পাল্টানোর সহর্ষ মুহূর্ত ...
এভাবেও মুছে যাওয়া যায়!
#
এভাবেও মুছে যাওয়া যায় -
ক্যালেন্ডারের পাতা বদলের আশ্চর্য সময়
যেমন ইতিহাস হয়ে যায় অবহেলে;
কতো রাজা রানী মন্ত্রী যন্ত্রী
মুছে যায় সময়ের ষড়যন্ত্রে -
দলিল-দস্তাবেজ মরচে-ধরা কথকতার মতো
মহাফেজখানা গড়ে। তবু ডানা মেলে
কাঙ্খিত মুহূর্ত আর ফিরে আসে না। বড়ো অসময়।
এভাবেও মুছে যাওয়া যায়!
#
এভাবেও মুছে যাওয়া যায় -
ঝরে যাওয়া শাল পলাশের ক্লান্ত ফুলের মতো,
অপ্রয়োজনীয় চিঠিপত্র কিংবা ফালতু গল্পের মতো,
রাত-ইতিহাস মনে রাখে না বিকেলের আয়োজন,
প্রদীপ জ্বালানোর আগে থাকে ঢের প্রস্তুতি ...
প্রবাসে যাওয়ার আগে কতো অশ্রুজল ...
না লেখা গল্পের শিরোনাম ভুল হয়ে যায় ...
বিস্মৃতি আসে বাতাসের বাঁশিতে ...
এভাবেও মুছে যাওয়া যায়!
#
এভাবেও মুছে যাওয়া যায় -
আর্যাবর্ত জুড়ে রাজত্ব চালায় শক-হূণ-পাঠান,
মঙ্গোল অথবা থোড়-বড়ি-খাড়া...
ভেঙে পড়ে রাজচ্ছত্র কালের নিয়মে ...
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় অকারণ পোড়ে
কোনও এক সম্রাটের অকারণ আক্রোশে ...
সভ্যতা-সংস্কৃতি মুখ লুকায় ব্যভিচারের অন্তরালে,
এভাবেও মুছে যাওয়া যায়!!
২. গ্রামের হাট
আজও আছে গ্রামের হাট, আছে লেনাদেনা,
জোরকদমে চলে আজও জিনিস বেচাকেনা।
রাস্তার পাশে, নদীর ধারে, রেলস্টেশনের ধারে,
গ্রাম-গঞ্জের প্রাচীন সে হাট বসে বুধ বারে ।
হাঁস-মুরগি, মাছ কিংবা নানান সবজি কাঁচা,
নেইকো হাটে স্থায়ী দোকান সবই বাঁশের মাচা।
শাড়ি-লুঙ্গি, অল্প দামের রেডিমেড-ও নানা,
দা, খুরপি, বেলুন-পিঁড়ি কিনতে নেইকো মানা।
মাটির পাত্র, হাঁড়ি-কলসি কিংবা মনোহারী,
হাটে গেলে মিলবে গো ভাই নানান দরকারী।
ফেরিওয়ালার বিচিত্র হাঁক, নানা রকম পণ্য,
ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম বেচাকেনার জন্য।
ইঁদুর মারা বিষ কিংবা প্লাস্টিকের সব খেলনা,
হাটে পাবে বাঁশের ঝুড়ি কিংবা বেতের দোলনা।
কবিরাজি ওষুধ আর বাতের নানান তেল,
মশলাপাতি, ফলের দোকান, ডাব নারকেল।
হাঁকাহাঁকি – দরাদরি – জিনিস চেনা-চিনি,
মুখটা জুড়ে চওড়া হাসি লাভটা পেলেন যিনি।
গ্রামীণ জীবন জুড়ে থাকে সপ্তাহের এই হাট,
হাট ফুরালেই অন্ধকারে একলা জাগে মাঠ।।
***লেখক পরিচিতি :-
গোবিন্দ মোদক।
সম্পাদক: কথা কোলাজ সাহিত্য পত্রিকা।
পিতা: কানাই লাল মোদক।
মাতা: প্রতিভা রাণী মোদক।
লেখকের জন্ম: ৫-ই জানুয়ারি, ১৯৬৭
বাসস্থান: রাধানগর, কৃষ্ণনগর, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ। ডাক সূচক- 741103
মুঠোফোন নম্বর- 7044404333
শিক্ষাগত যোগ্যতা: M.Com (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)।
পেশা: প্রথম জীবনে অধ্যাপনা, পরবর্তীতে India Post (ডাক বিভাগ)-এ কর্মরত।
নেশা: লেখালিখি। বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র হওয়া সত্বেও ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি ঐকান্তিক অনুরাগে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম। ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, রম্য রচনা, উপন্যাস ইত্যাদি লিখলেও ছোটদের জন্য ছড়া-কবিতা ও গল্প লেখার মধ্যেই খুঁজে পান অধিকতর তৃপ্তি। প্রচারবিমুখ আত্মমগ্ন এই মানুষটি লেখালিখি ছাড়াও ভালোবাসেন: বই পড়া, গান শোনা, পত্রিকা সম্পাদনা, অনুষ্ঠান সঞ্চালনা, বেড়ানো, সাহিত্য বিষয়ক নির্ভেজাল আড্ডা, এলোমেলো ভাবনায় নিমগ্ন হওয়া।
অপছন্দের বিষয়: যে কোনও ধরনের রাজনীতি।
প্রথম লেখালিখি: প্রথম কবিতা "প্রেম" প্রকাশিত হয় শারদীয়া অভিষেক (১৯৮৯) পত্রিকায়। প্রথম গল্প ছাপা হয় তটরেখা পত্রিকায় (হরিপদ'র গল্প) ১৯৮৯ সালে। প্রথম কিশোর উপন্যাস "গুপ্তধনের খোঁজে" প্রকাশিত হয়েছে ১৯৮৯ সালে শারদীয় "আসানসোল হিতৈষী" পত্রিকায়। লেখালেখির সেই প্রবাহ এখনও ভীষণভাবেই বহমান … নানা ধরণের লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে চলেছে দেশ ও বিদেশের অজস্র পত্র-পত্রিকা ও দৈনিকে।
প্রকাশিত গ্রন্থ: হারিয়ে গেছে ডাক-বাক্স, ধিতাং ধিতাং বোলে, অদ্ভুত যতো ভূতের গল্প।
প্রকাশিতব্য গ্রন্থ: পদ্য ভরা আমার ছড়া, ছন্দ ভরা আমার ছড়া, রূপকথার রূপ ও কথা, ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ, গুপ্তধনের সন্ধানে, জীবনের রোদ-রং ইত্যাদি।
সম্মাননা: পাঠকের ভালোলাগা এবং ভালোবাসা-ই সবচেয়ে বড় পুরস্কার।